ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম কিয়ামতের আগে আবির্ভূত হবেন। তিনি অত্যন্ত ন্যায় পরায়ণতার সাথে বাদশাহী করবেন।
মাহদী শব্দের শাব্দিক অর্থঃ এর অর্থ হিদায়াতপ্রাপ্ত। অর্থাৎ মাহদী বলা হয় এমন ব্যক্তিকে, যাকে আল্লাহ তা’আলা হিদায়াত দান করেছেন।
এছাড়া অনেক সময় স্বয়ং হিদায়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তি অপর ব্যক্তির জন্যও হিদায়াতের মাধ্যম কিংবা কারণ হতে পারেন; সে আলোকে রূপক অর্থে মাহদী শব্দের অর্থ হিদায়াত দানকারীও হতে পারে। (ইসলামি বিশ্বকোষ)
পারিভাষিক অর্থঃ সাধারণত হাদীস ও সুনানের বিভিন্ন গ্রন্থে মাহদী শব্দ একটি বিশেষ পারিভাষিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ হাদীস ও সুন্নাহর ভাষ্যমতে মাহদী বলতে বিশেষ এমন এক ব্যক্তিত্বকে বুঝানো হয়, যিনি শেষ যুগে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমাজের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অধঃপতনের ক্রান্তিকাল মুহুর্তে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও পৃথিবীতে ইসলামের বিজয়ের নায়ক হবেন।
মাহদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ তাঁর মূল নাম হবে মুহাম্মাদ। তিনি শেষ নবীর উম্মত হয়েই ইসলামের সহযোগিতার লক্ষ্যে শেষ যুগে পৃথিবীতে আবির্ভুত হবেন। হাদীসে তাঁর সম্পর্কে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
এই মাহদী সম্পর্কে প্রমাণিত বর্ণনা সমূহের বিস্তারিত বিবরণ একসাথে কোথাও পাওয়া যায় না। অবশ্য তাঁর কিছু নিদর্শন ও বৈশিষ্ট্য এবং তাঁর আবির্ভাবের সময়ে পৃথিবীর অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কে নবীজি থেকে বর্ণিত হওয়া ছাড়াও কিছু কিছু বিবরণ সাহাবী আলী বিন আবি তালিব রাযি. থেকেও বর্ণিত হয়েছে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
যখন তোমরা খুরাসান এলাকার দিক থেকে কালো পতাকা আসতে দেখবে, তখন তার নিকটে আসবে। কারণ সেখানে আল্লাহ তা’আলার খলীফা মাহদী থাকবে। (মুসনাদে ইমাম মুহাম্মাদ; দালাইলুন নুবুওয়্যাহ- বায়হাকী)
বিভিন্ন বর্ণনার আলোকে মাহদীর পরিচয় ও নিদর্শন
উম্মে সালামা রাযি. সূত্রে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
মাহদী যতক্ষণ প্রকাশ পাবেন না, ততক্ষণ পৃথিবী ধবংস হবে না এবং কিয়ামতও সংঘটিত হবে না। সে আমার বংশধরের মধ্য থেকে ফাতিমার পরবর্তী প্রজন্ম থেকে আগমন করবে। তাঁর নাম হবে আমার নামে; অর্থাৎ মুহাম্মাদ। আর তাঁর পিতার নামও আমার পিতার নামের অনুরূপ হবে; অর্থাৎ তাঁর পিতার নাম হবে আব্দুল্লাহ।
তাঁর চরিত্র হবে নবী-রাসূলগণের মতো, কিন্তু তাঁর গঠনাকৃতি সবার থেকে ভিন্নতর হবে। (সুনানে আবি দাউদঃ ২/২৪৮)
সাহাবী আলী বিন আবি তালিব রাযি. সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন-
মাহদীর মাথায় চুল থাকবে না। তাঁর নাক বাঁকা ও খাড়া হবে। তাঁর আগমনের মুহুর্তে সমগ্র পৃথিবী অত্যাচার-অনাচার আর নানা রকমের অন্যায়-অপরাধে জর্জরিত থাকবে।
পৃথিবীজুড়ে কুফরি ও শিরকের সয়লাব ঘটবে। অবস্থা এমন বেগতিক হবে যে, যারা ওই সময়ে আল্লাহ আল্লাহ করবে, তাদেরকে হত্যা করা হবে।
তখন মাহদী আগমন করে সারা পৃথিবীতে ন্যায় বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করবেন। মানুষ আল্লাহ তা’আলার দিকে ধাবিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি তাদেরকে শারীরিক শাস্তি প্রদান করতে থাকবেন।
তাঁর শাসনামলে লোকেরা এতো নিরাপদ ও সুখে বসবাস করবে, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি, শুনেওনি। তখন আকাশ থেকে রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হবে। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে ব্যাপকহারে নানা রকমের ফসল উৎপাদিত হবে।
মানুষের সম্পদ ও টাকা-পয়সা এতো বেশি হবে যে, এগুলো লোকেরা পায়ের নীচে মাড়াবে। কোনো লোক মাহদীকে বলবে- হে মাহদী! আমাকে এই সম্পদ দিয়ে দাও। তিনি বলবেন- হ্যাঁ, তুমি নিয়ে যাও। এ কথা বলে তিনি তাকে তার আঁচল ভরে এ পরিমাণ সম্পদ প্রদান করবেন, যে পরিমাণ সে নিতে পারে। (সুনানে তিরমিযীঃ ২/৪৬)
সাহাবী আবু সায়ীদ খুদরী রাযি. সূত্রে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
মাহদী হবেন উজ্জল ললাট এবং উন্নত নাসিকা বিশিষ্ট। তিনি পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায় বিচার দ্বারা এমনভাবে ভরে দিবেন, যেমন নাকি এর আগে বর্বরতা ও অন্যায়-অবিচারে ভরপুর ছিলো। তিনি এ পৃথিবীতে সাত বছর ক্ষমতায় থাকবেন। (সুনানে আবি দাউদঃ ২/২৪৮)