ঈমানের মূল বিষয় সর্বমোট সাতটি। এই সাতটি বিষয় ঈমানের আরকান বা মূলভিত্তি। ঈমানের এই বিষয়গুলো ব্যাখ্যাসহকারে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা আবশ্যক। উক্ত সাতটি বিষয়ের ঘোষণা নিম্নরূপঃ
آمَنْتُ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ اللهِ تَعَالي وَالْبَعْثِ بَعْدَ الْمَوْتِ-
অর্থঃ আমি নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ওপর ঈমান আনলাম বা অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বিশ্বাস করলাম-
১. আল্লাহ তা’আলার ওপর।
২. তাঁর ফিরিশতাগণের ওপর।
৩. তাঁর প্রেরিত সকল আসমানী কিতাবসমূহের ওপর।
৪. তাঁর প্রেরিত সকল নবী-রাসূলগণের ওপর।
৫. কিয়ামত দিবসের ওপর অর্থাৎ সমস্ত বিশ্বজগত একদিন শেষ হবে।
৬. তাকদীরকে বিশ্বাস করি। অর্থাৎ জগতে ভালো-মন্দ যা কিছু হয়, সবই আল্লাহ তা’আলার সৃষ্ট এবং তাঁরই পক্ষ থেকে নির্ধারিত।
৭. মৃত্যুর পর কিয়ামতের দিন পুনর্বার জীবিত হতে হবে, তাও অটলভাবে বিশ্বাস করি।
উল্লেখিত ৭টি বিষয়ের মধ্যে ৭ নং বিষয় ৫ নং বিষয়েরই অন্তর্ভুক্ত একটি প্রশাখা। তবে এর বিশেষ গুরুত্বের কারণে তাকে ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঈমানের সাতটি মৌলিক বিষয়ের বিবরণ
এক. আল্লাহ তা’আলার ওপর ঈমান
আল্লাহ তা’আলার ওপর ঈমান আনার অর্থ এই কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় এবং অতুলনীয়। তাঁর কোনো প্রকার অংশ বা অংশীদার বা শরীক নেই, তাঁর কোনো কিছুর অভাব নেই। তিনিই সকলের সব অভাব পূরণকারী। তিনি কারো পিতা নন, পুত্রও নন, তাঁর সমতুল্য কেই নেই। একমাত্র তিনিই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা। কোনো জ্ঞান বা চক্ষু আল্লাহ তা’আলাকে আয়ত্ব করতে পারে না। তিনি চিরকাল আছেন এবং থাকবেন। তিনি অনাদি ও অনন্ত। আল্লাহ তা’আলা ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। তিনিই একমাত্র ইবাদতের যোগ্য।
সার কথা আল্লাহ তা’আলার বিষয়ে তিনটি কথা অবশ্যই মানতে হবে।
১) তিনি এক, অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। সৃষ্টজীবের সাথে তাঁর কোনো তুলনা হয় না।
কুরআনের ভাষায় আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদের বর্ণনা
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ – اللَّهُ الصَّمَدُ – لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ- وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ-
অর্থঃ হে নবী! আপনি বলে দিন- তিনিই আল্লাহ। আল্লাহ তা’আলা অমুখোপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ কেউই নেই। (সূরা ইখলাস)
وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ-
অর্থঃ তোমাদের ইলাহ একক ইলাহ। তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু। (সূরা বাকারাহ-১৬৩)
إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ فَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ قُلُوبُهُم مُّنكِرَةٌ وَهُم مُّسْتَكْبِرُونَ
অর্থঃ তোমাদের ইলাহ একক ইলাহ। যারা পরকালের জীবনে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকার প্রদর্শনকারী। (সূরা নাহল-২২)
আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَقَالَ اللَّهُ لَا تَتَّخِذُوا إِلَٰهَيْنِ اثْنَيْنِ إِنَّمَا هُوَ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ فَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ-
অর্থঃ তোমরা দুই ইলাহ গ্রহণ করো না। তিনিই একমাত্র ইলাহ। অতএব আমাকেই ভয় করো। (সূরা নাহল-৫১)
لَوْ كَانَ فِيهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا فَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ-
অর্থঃ যদি নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে একাধিক ইলাহ থাকতো, তা হলে তারা উভয়েই ধবংস হয়ে যেতো। (সূরা আম্বিয়া-২২)
اتَّبِعْ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ-
অর্থঃ আপনি ওই পথের অনুসরণ করুন, যার আদেশ আপনার রবের পক্ষ থেকে আসে। তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। আর আপনি মুশরিকদের এড়িয়ে চলুন। (সূরা আন’আম-১০৬)
لَّقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ ثَالِثُ ثَلَاثَةٍ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا إِلَٰهٌ وَاحِدٌ وَإِن لَّمْ يَنتَهُوا عَمَّا يَقُولُونَ لَيَمَسَّنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ-
অর্থঃ যারা বলে- আল্লাহ তিনের একজন, তারা অবশ্যই কাফির। অথচ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। যদি তারা এ কথা থেকে সরে না আসে, তা হলে তাদের মধ্যে যারা কুফরির ওপর অটল থাকবে, তাদের ওপর কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পতিত হবে। (সূরা মায়িদাহ-৭৩)
قُلْ أَيُّ شَيْءٍ أَكْبَرُ شَهَادَةً قُلِ اللَّهُ شَهِيدٌ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَٰذَا الْقُرْآنُ لِأُنذِرَكُم بِهِ وَمَن بَلَغَ أَئِنَّكُمْ لَتَشْهَدُونَ أَنَّ مَعَ اللَّهِ آلِهَةً أُخْرَىٰ قُل لَّا أَشْهَدُ قُلْ إِنَّمَا هُوَ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ وَإِنَّنِي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ-
অর্থঃ হে নবী! আপনি জিজ্ঞাসা করুন, সর্ববৃহৎ সাক্ষ্যদাতা কে? আপনি বলে দিন- আল্লাহ তা’আলাই আমার এবং তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। আমার প্রতি এ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে আমি তোমাদেরকে এবং যাদের কাছে এ কুরআন পৌঁছেছে, সবাইকে সতর্ক করতে পারি। তোমরা কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ তা’আলার সাথে আরো অন্যান্য ইলাহও আছে?
আপনি বলুন- আমি এ রকম সাক্ষ্য দিবো না। আরো বলে দিন- তিনিই একমাত্র ইলাহ। আমি অবশ্যই তোমাদের এ সব শিরকি কার্যকালাপ থেকে মুক্ত। (সূরা আন’আম-১৯)
২) তাঁর অনেকগুলো অনাদি-অনন্ত সিফাত বা গুণাবলী রয়েছে, সেগুলো একমাত্র তাঁর জন্যই নির্ধারিত। সেসব গুণের মধ্যে অন্য কেউ শরিক নেই। যথা-
তিনিই সৃষ্টিকর্তা। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করবেন। কিয়ামতের দিন পুনর্বার তিনি সকলকে জীবিত করবেন।
তিনিই একমাত্র রিযিকদাতা, জীবন-মরণের বিধাতা, বিধানদাতা।
অদৃশ্য জগত সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ অবগত। তিনি ছাড়া আর কেউ অদৃশ্য বিষয়ের কোনো তথ্য জানেন না। এমনকি নবী-রাসূল ওলীগণও নন।
তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই।
অন্য সবকিছুই ক্ষয়শীল ও ধ্বংসশীল, কিন্তু তাঁর ক্ষয়ও নেই, ধ্বংসও নেই।
সবকিছুর ওপর তাঁর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত। সবকিছুর ওপরই তাঁর ক্ষমতা চলে।
আল্লাহ তা’আলা কারো মুখাপেক্ষী নন, সবই তাঁর মুখাপেক্ষী।
তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি আগুনকে পানি এবং পানিকে আগুন করতে পারেন। এই যে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আকাশ, বাতাস, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি বিদ্যমান, তিনি হুকুম করলে মুহুর্তের মধ্যে এসব ধবংস হয়ে যাবে।
তিনি সর্বজ্ঞ, তিনি না জানেন- এমন কিছুই নেই। মনের মধ্যে যে ভাবনা বা কল্পনা উদয় হয়, তাও তিনি জানেন।
তিনি সবকিছুই দেখছেন। সবকিছুই শুনছেন। মৃদু আওয়ায এমনকি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ আওয়াযও তিনি শুনেন।
আল্লাহ তা’আলাই একমাত্র হাজির-নাজির। তিনি ছাড়া আর কেউ হাজির নাজির নন। এমনকি নবী-ওলীগণও নন।
তিনি যা ইচ্ছা, তাই করতে পারেন। কোনো ওলী, পয়গম্বর বা ফেরেশতা তাঁর ইচ্ছাকে রদ বা প্রতিহত করতে পারেন না। তিনি আদেশ ও নিষেধ জারি করেন।
তাঁর কোনো অংশীদার কিংবা সহকর্মী বা উজির-নাজির নেই। তিনি একক কর্তৃত্বর অধিকারী। তিনিই সর্বোপরি বাদশাহ, রাজাধিরাজ; সকলেই তাঁর বান্দা ও গোলাম। তিনি বান্দাদের ওপর বড়ই মেহেরবান।
তিনি সব দোষ-ত্র“টি থেকে পবিত্র। তাঁর মাঝে আদৌ কোনো রকমের দোষ-ত্র“টি নেই। তাঁর ক্রিয়া-কর্ম, আদেশ-নিষেধ সবই ভালো ও মঙ্গলময় কোনো একটিতেও বিন্দুমাত্র অন্যায় বা দোষ নেই।
তিনিই বিপদ-আপদ দেন এবং বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধার করেন, অন্য কেউ কোনো প্রকার বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি দিতে পারে না।
প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা তাঁরই। তিনিই সকল সম্মান ও মর্যাদার অধিপতি। তিনিই প্রকৃত মহান। একমাত্র তিনিই নিজেকে নিজে বড় বলতে পারেন। এতদ্ব্যতীত অন্য কারো এ রকম বলার ক্ষমতা ও অধিকার নেই।
তিনি এমন দয়ালু যে, দয়া করে অনেকের গুনাহ তিনি মাফ করে দেন। তিনি অনেক বড় ক্ষমাশীল।
তিনি অত্যন্ত পরাক্রমশালী। তাঁর প্রভাব ও প্রভুত্ব সকলের ওপর; কিন্তু তাঁর ওপর কারো প্রভাব বা প্রভুত্ব চলে না।
তিনি বড়ই দাতা। সমস্ত জীবের ও যাবতীয় চেতন-অচেতন পদার্থের আহার তিনি দান করেন। তিনিই রুযির মালিক। রুযি কমানো-বাড়ানো তাঁরই হাতে। তিনি যার রিযিক কমাতে ইচ্ছা করেন, তার রিযিক কম করে দেন। যার রিযিক বৃদ্ধি করার ইচ্ছা করেন, বৃদ্ধি করে দেন।
কাউকে সম্মানিত বা লাঞ্ছিত করার ক্ষমতা তাঁরই হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন, আবার যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। এসব তাঁরই ক্ষমতায়, তাঁরই অধীনে। অন্য কারো এতে কোন রকম ক্ষমতা বা অধিকার নেই।
তিনি প্রত্যেকের যোগ্যতা অনুসারে যার জন্য যা ভালো মনে করেন, তার জন্য তাই ব্যবস্থা করেন। তাতে কারো কোনো প্রকার প্রতিবাদ করার অধিকার নেই।
তিনি ন্যায়পরায়ণ, তাঁর কোনো কাজেই অন্যায় বা অত্যাচারের লেশমাত্র নেই।
তিনি বড়ই সহিষ্ণু, অনেক কিছু সহ্য করেন। কত পাপিষ্ঠ তাঁর নাফরমানী করছে, তাঁর ওপর কত রকম দোষারোপ এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পর্যন্ত করছে, তারপরও তিনি তাদের রিযিক দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি এমনই গুণগ্রাহী এবং উদার যে, তাঁর আদৌ কোনো প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও মানুষ তাঁর ইবাদত-বন্দেগী করলে এবং তাঁর আদেশ পালন করলে, তিনি তার বড়ই মূল্যায়ন করেন এবং সন্তুষ্ট হয়ে আশাতীতরূপে পুরস্কার দান করেন। তিনি এমনই মেহেরবান ও দয়ালু যে, তাঁর নিকট দরখাস্ত করলে তিনি তা মঞ্জুর করেন।
তাঁর ভান্ডার অফুরন্ত, তাঁর ভান্ডারে কোনো কিছুরই অভাব নেই।
তিনি অনাদি-অনন্তকালব্যাপী সকল জীব-জন্তু ও প্রাণিজগতের আহার যোগান দিয়ে আসছেন।
তিনি জীবন দান করছেন, ধন-রতœ দান করছেন, বিদ্যা-বুদ্ধি দান করছেন। অধিকন্তু আখিরাতেও অসংখ্য ও অগণিত সাওয়াব ও নিয়ামত দান করবেন। কিন্তু তাঁর ভান্ডার তবুও বিন্দুমাত্র কমেনি বা কমবে না।
তাঁর কোনো কাজই হিকমত ও মঙ্গল ছাড়া নয়। কিন্তু সব বিষয় সকলের বুঝে আসে না। তাই নির্বুদ্ধিতাবশত কখনো না বুঝে দিলে বা মুখে প্রতিবাদ করে ঈমান নষ্ট করা উচিত নয়।
তিনিই সব কর্ম সমাধানকারী। বান্দা চেষ্টা করবে, কিন্তু সে কর্ম সমাধানের ভার তাঁরই কুদরতী হাতে ন্যস্ত।
তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন।
তাঁর হাকীকত ও স্বরূপ এবং তিনি যে কত অসীম, তা কারো বোঝার ক্ষমতা নেই। কেবলমাত্র তাঁর সিফাত অর্থাৎ গুণাবলী ও তাঁর কার্যাবলীর দ্বারাই তাঁকে আমরা চিনতে পারি।
মানুষ পাপ করে যদি খাঁটিভাবে তাওবা করে, তবে তিনি তা কবুল করেন। যে শাস্তির উপযুক্ত, তাকে তিনি শাস্তি দেন।
তিনিই হিদায়াত দেন।
তাঁর নিদ্রা নেই। এমনকি তাঁর ঝিমুনিও আসে না।
সমস্ত বিশ্বজগতের রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানে তিনি বিন্দুমাত্রও ক্লান্ত হন না। তিনিই সমস্ত বিশ্বের রক্ষক।
এ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলাকে চিনার জন্য তাঁর কতগুলো সিফাতে কামালিয়া অর্থাৎ মহৎ গুণাবলীর বর্ণনা দেওয়া হলো। এতদ্ব্যতীত যত মহৎ গুণ আছে, আল্লাহ তা’আলা সবগুলো দ্বারা বিভূষিত।
ফলকথা এই যে, সৎ ও মহৎ যত গুণ আছে, অনাদিকাল যাবত সেসব আল্লাহ তা’আলার মধ্যে আছে এবং চিরকাল থাকবে। কিন্তু কোন দোষ-ত্র“টির লেশমাত্রও তাঁর মধ্যে নেই।
আল্লাহ তা’আলার গুণ সম্বন্ধে কুরআন মাজীদে এবং হাদীসের কোনো কোনো জায়গায় এরূপ উল্লেখ আছে, তিনি আশ্চর্যান্বিত হন, হাসেন, কথা বলেন, দেখেন, শুনেন, সিংহাসনে সমাসীন হন, আসমানে অবতরণ করেন। তাঁর হাত, পা, মুখ ইত্যাদি আছে। এসব ব্যাপারে কখনো বিভ্রান্তিতে পড়তে বা তর্ক-বিতর্ক করতে নেই।
সহজ-সরলভাবে আমাদের আকীদা ও ইয়াকীন এই রাখা উচিত, আমাদের বা অন্য কোনো সৃষ্টজীবের মতো তাঁর ওঠা-বসা বা হাত-পা তো নিশ্চয়ই নয়, তবে কেমন? তা আমাদের জ্ঞানের বাইরে। সাবধান! সাবধান!! শয়তান ধোঁকায় না পড়ে এই আকীদা ও অটল বিশ্বাস রাখবেন যে, আমাদের বা অন্য কোন সৃষ্টজীবের সাদৃশ্য হতে আল্লাহ তা’আলা সম্পূর্ণ পবিত্র ও মহান।
এই দুনিয়াতে জাগ্রত অবস্থান চর্ম চোখে কেউই আল্লাহ তা’আলাকে দেখতে পারেনি। কখনো পারবেও না। তবে জান্নাতে গিয়ে জান্নাতীরা আল্লাহ তা’আলার সাক্ষাত লাভ করবে। জান্নাতে এটাই সর্বোৎকৃষ্ট নিয়ামত হবে। (আল কুরআনুল কারীম)
৩) একমাত্র তিনিই ইলাহ। শুধু তিনিই মাখলুকের ইবাদত-বন্দেগী পাওয়ার উপযুক্ত। আর কেউই ইবাদত পাওয়ার উপযুক্ত নয়।
আল্লাহ তা’আলার ওপর ঈমান আনার অর্থ শুধু আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্ব স্বীকার করা নয়; বরং অস্তিত্ব স্বীকার করার সাথে সাথে তার উপরোক্ত গুণবাচক কথাগুলো স্বীকার করাও জরুরি। নতুবা আল্লাহ তা’আলার ওপর সম্পূর্ণরূপে ঈমান আনা হবে না এবং সে ঈমান গ্রহণযোগ্যও হবে না।
এ বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা কুরআনে ইরশাদ করেন-
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي-
অর্থঃ আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই। অতএব তোমরা আমারই ইবাদত করো এবং আমারই স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো। (সূরা তাহা-১৪)
وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ-
অর্থঃ আর তোমাদের উপাস্য একইমাত্র উপাস্য। তিনি ছাড়া মহা করুণাময় দয়ালু অন্য কেউই নেই। (সূরা বাকারাহ-১৬৩)
চলবে ……