ছয়. ভালো-মন্দ তাকদীরের ওপর ঈমান
তাকদীরের ওপর ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, মনে-প্রাণে অটল বিশ্বাস রাখতে হবে যে, সমগ্র বিশ্বজগতে ভালো বা মন্দ যা কিছু হয়, সবই আল্লাহ তা’আলা আগে থেকেই জানেন এবং লাওহে মাহফুযে তিনি তা লিখে রেখেছেন। তিনি যেমন জানেন, তেমনই হয়।
এর মধ্যে কোনো ব্যতিক্রম হয় না। আল্লাহ তা’আলাই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। তার ক্ষমতা সর্বব্যাপী। তার ক্ষমতা ছিন্ন করে বের হতে পারে- এমন কেউ নেই। তিনি সর্বজ্ঞ, আদি-অন্ত সবকিছুই তিনি সঠিকভাবে জানেন।
মানুষকে আল্লাহ তা’আলা ভালো-মন্দ বুঝার এবং কাজ করার ক্ষমতা দান করেছেন এবং ইচ্ছাশক্তিও দান করেছেন। তার দ্বারা নিজ ক্ষমতায় নিজ ইচ্ছায় সে পাপ ও পুণ্যের কাজ করে। পাপ কাজ করলে আল্লাহ তা’আলা অসন্তুষ্ট এবং পুণ্যের কাজ করলে সন্তুষ্ট হন। কাজ করা ভিন্ন কথা আর সৃষ্টি করা ভিন্ন কথা। সৃষ্টি তো সবকিছুই আল্লাহ তা’আলা করেন। কিন্তু নিজের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলা মানুষকে দান করেছেন।
মানুষ জীবনভর যতই ভালো বা মন্দ থাকুক না কেনো, যে অবস্থায় তার মৃত্যু হবে, সে হিসেবে শান্তি বা শাস্তি পাবে। যথা- এক ব্যক্তি সারা জীবন মু’মিন ছিলো, কিন্তু মৃত্যুর আগে সে ইচ্ছাপূর্বক কুফরী বা শিরকী কথা বললো বা ঈমান বিরোধী কাজ করলো। তাহলে সে কাফির সাব্যস্ত হবে।
সুতরাং দিলের মধ্যে আল্লাহ তা’আলার রহমতের আশা ও গযবের ভয় রাখা জরুরী। আল্লাহ তা’আলা মানুষকে তার অসাধ্য কোনো হুকুম করেননি। যা কিছু আদেশ করেছেন বা নিষেধ করেছেন, সবই বান্দার আয়ত্বে ও ক্ষমতার ভিতরে রেখে করেছেন।
আল্লাহ তা’আলার ওপর কোনো কিছু করা বাধ্যতামূলক নয়। তিনি যা কিছু দান করেন, সবই তাঁর রহমত এবং মেহেরবানী মাত্র। তাঁর ওপর কারো কোনরূপ দাবি বা হুকুম কিংবা কর্তৃত্ব চলে না। ছোট হতে ছোট গুনাহের কারণে তিনি শাস্তি দিতে পারেন এবং বড় থেকে বড় পাপও তিনি মার্জনা করতে পারেন।
সবই তাঁর ইচ্ছাধীন। তিনি কাউকে দোযখে দিলে সেটাই ইনসাফ এবং কাউকে জান্নাতে প্রবেশ করালে সেটা তাঁর রহমত। আপত্তি করার অধিকার কারো নেই।
কুরআনের বর্ণনায় ভালো-মন্দ তাকদীর
نَحْنُ قَدَّرْنَا بَيْنَكُمُ الْمَوْتَ وَمَا نَحْنُ بِمَسْبُوقِينَ-
অর্থঃ আমি তোমাদের মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই। (সূরা ওয়াকিয়া-৬০)
وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ-
অর্থঃ আল্লাহ তা’আলা যদিআপনার ওপর কোনো কষ্ট আরোপ করতে চান, তা হলে তা নিরসন করার ক্ষমতা কারো নেই।
পক্ষান্তরে তিনি আপনার কোনো কল্যাণ করতে চাইলে তাও প্রতিহত করার ক্ষমতা কারো নেই। তিনি স্বীয় বান্দাগণের যাকে অনুগ্রহ করতে চান, তাকেই দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল দয়াণু সত্ত্বা। (সূরা ইউনুস-১০৭)
وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلَّا عِندَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُومٍ-
অর্থঃ আমার কাছে প্রত্যেক বিষয়ের ভান্ডার রয়েছে; আমি নির্দিষ্ট পরিমাণেই তা অবতরণ করাই। (সূরা হিজর-২১)
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ-
অর্থঃ আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিত করে সৃষ্টি করেছি। (সূরা কামার-৪৯)
وَاللَّهُ يُقَدِّرُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ-
অর্থঃ আল্লাহ তা’আলা দিবা-রাত্রি পরিমাপ করেন। (সূরা মুযযাম্মিল-২০)