তিন. আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত কিতাব সমূহের ওপর ঈমান
আল্লাহ তা’আলার প্রেরিত কিতাবসমূহের ওপর ঈমান আনার অর্থ হলো, এই কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা’আলা মানব জাতি ও জীন জাতির হিদায়াতের জন্য ছোট-বড় বহু কিতাব জিবরীল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের ওপর নাযিল করেছেন।
তাঁরা সেসব কিতাবের দ্বারা নিজ নিজ উম্মতকে দ্বীনের কথা শিখিয়েছেন। উক্ত কিতাবসমূহের মধ্যে চারটি কিতাব অধিক প্রসিদ্ধ- যা প্রসিদ্ধ চারজন রাসূলের ওপর নাযিল করা হয়েছে। তার মধ্যে কুরআন শরীফ সর্বশেষ কিতাব। এরপরে আর কোনো কিতাব নাযিল হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন শরীফের বিধানই চলতে থাকবে।
পবিত্র কুরআনের কোনো সূরা আয়াত এমনকি কোনো শব্দ হরকত, নুকতার মধ্যে এমনিভাবে অর্থের মাঝেও বিন্দুমাত্র পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বিলুপ্তি আসেনি এবং কিয়ামত পর্যন্ত আসাও সম্ভব নয়। কারণ স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা কুরআনের হিফাযতের ওয়াদা করেছেন এবং তা নিজের দায়িত্বে রেখেছেন। অন্যান্য কিতাবগুলোতে বিধর্মী লোকেরা অনেক কিছু পরিবর্তন করে ফেলেছে।
কারণ আল্লাহ তা’আলা দুনিয়াতে সেগুলোর হিফাযতের ওয়াদা করেননি। পবিত্র কুরআনের প্রতিটি সূরা, প্রতিটি আয়াত, প্রতিটি হরফ এমনকি প্রতিটি নুকতাহ ও হরকতের প্রতি ঈমান রাখতে হবে। কোন একটি অস্বীকার করলে ঈমান থাকবে না, কাফির হয়ে যাবে।
কুরআন ও তার ব্যাখ্যা হাদীসে তাঁর দ্বীন সম্পর্কিত সব কথা বর্ণনা করে দিয়েছেন। কোনো অংশ গোপন রাখেননি। সুতরাং এখন নতুন কোনো কথা বা প্রথা চালু করা সঠিক নয়।
দ্বীনের ব্যাপারে এরূপ নতুন কথাকে ইলহাদ বা বিদ’আত বলে। যা অত্যন্ত মারাত্মক গুনাহ এবং পথভ্রষ্টতা।
কুরআন-হাদীসের মনগড়া ব্যাখ্যা দেওয়া কুফরী কাজ। কোনো ফরযকে অস্বীকার করা কুফরী কাজ। তেমনিভাবে কোনো হালালকে হারাম মনে করা বা কোনো অকাট্য হারাম বা গুনাহকে হালাল বলে বিশ্বাস করা কুফরী। এর দ্বারা ঈমান চলে যায়।
কুরআনের বর্ণনায় আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত কিতাব সমূহ
وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ-
অর্থঃ আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সে সব বিষয়ের ওপর, যা কিছু তোমার এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে আর আখিরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। (সূরা বাকারাহ-৪)
آمَنَ الرَّسُوْلُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَّبِّه وَالْمُؤْمِنُوْنَ- كُلٌّ آمَنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه- لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْ رُسُلِه- وَقَالُوْا: سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا- غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ-
অর্থঃ রাসূল ঈমান আনয়ন করেছেন ওই সকল বস্তু সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও। সবাই ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর নবীগণের প্রতি।
তারা বলেন- আমরা তাঁর নবীগণের মাঝে কোন পার্থক্য করি না এবং তারা আরো বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা আপনার নিকট ক্ষমা চাই, ওহে আমাদের পালনকর্তা! আমরা সকলেই আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করি। (সূরা বাকারাহ-২৮৫)
قُلْ آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَالنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ-
অর্থঃ হে নবী! আপনি বলুন- আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ তা’আলার ওপর এবং আমাদের ওপর অবতীর্ণ বিষয়গুলোর ওপর এবং ঈমান এনেছি ওই সব বিষয়ের ওপর, যা অবতীর্ণ হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাঁদের সন্তানদের ওপর।
আমরা ঈমান এনেছি ওই সব বিষয়ের ওপর, যা মুসা, ঈসা এবং অন্যান্য নবী-রাসূলগণ পেয়েছেন তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আমরা তাদের কারো মাঝে কোনো রকমের পার্থক্য করি না; আমরা সবাই তাঁরই অনুগত। (সূরা আলে ইমরান-৮৪)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَىٰ رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنزَلَ مِن قَبْلُ وَمَن يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا-
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ তা’আলার ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করো। বিশ্বাস স্থাপন করো তাঁর রাসূল ও তাঁর কিতাবের ওপর। যা তিনি অবতীর্ণ করেছেন তাঁর রাসূলের ওপর এবং তাঁর পূর্ববর্তী রাসূলগণের ওপর।
যে আল্লাহ তা’আলার ওপর, তাঁর ফিরিশতাগণের ওপর, তাঁর কিতাব সমূহের ওপর, তাঁর রাসূলগণের ওপর এবং কিয়ামতের দিনের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে অনেক দুরে গিয়ে পতিত হবে। (সূরা নিসা-১৩৬)
لَّٰكِنِ الرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَالْمُؤْمِنُونَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَالْمُقِيمِينَ الصَّلَاةَ وَالْمُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أُولَٰئِكَ سَنُؤْتِيهِمْ أَجْرًا عَظِيمًا-
অর্থঃ কিন্তু যারা তাদের মধ্যে জ্ঞানী ও ঈমানদার, তাঁরা আপনার ওপর এবং আপনার আগে অবতীর্ণ বিষয় সমূগের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।
আর যারা নিয়মিত সালাত আদায়কারী ও যাকাত প্রদানকারী এবং আল্লাহ তা’আলা ও কিয়ামতের প্রতি আস্থাশীল, তাঁরাও এগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। মূলত আমি এমন লোকদেরকেই দান করবো মহাপূণ্য। (সূরা নিসা-১৬২)
فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّورِ الَّذِي أَنزَلْنَا وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ-
অর্থঃ অতএব তোমরা আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূল এবং অবতীর্ণ নুরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করো। তোমরা যা কিছু করো, সে সব বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা সম্যক অবগত। (সূরা তাগাবুন-৮)
চলবে ….