ঈমান আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো বিশ্বাস করা। পরিভাষায় ঈমানের অর্থ হলো আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্ব এবং তাঁর সমস্ত গুণাবলীর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা এবং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যত বিধান-আহকাম হাসিল করেছেন এবং অকাট্য দলিল দ্বারা যা প্রমাণিত হয়েছে- সেগুলোর কোনো একটি বাদ না দিয়ে সবগুলোকে মনে-প্রাণে বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস করা।
ঈমান কেনো সর্বাধিক মূল্যবান
এ পৃথিবীতে আল্লাহ তা’আলার যত সৃষ্টি ও নিয়ামত রয়েছে- এর মধ্যে সর্বধিক মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামত হলো ঈমান। ঈমানের মূল্য এ কারণে সবচেয়ে বেশি যে, ঈমানের কারণেই আল্লাহ তা’আলা এ আসমান-যমীন ও সমগ্র জগত এবং সর্বপ্রকার সুষ্টিকুলকে টিকিয়ে রেখেছেন।
অর্থাৎ ঈমান যতদিন এ জগতে বিদ্যমান থাকবে, ততদিন তিনি এ সমগ্র জগত ও সৃষ্টি টিকিয়ে রাখবেন। ঈমান মিটে গেলে তিনি এগুলো কিছুই রাখবেন না। কারণ এগুলো কোনো কিছুই তাঁর দরকার নেই। তাঁর কাছে দরকার শুধু ঈমান।
যথা- এক হাদীসে নববীতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
لا تقوم الساعة حتي لا يقال في الأرض الله الله-
অর্থঃ এ যমীনে যতক্ষণ অন্ত একজন আল্লাহ বলে ডাকার মতো কেউ থাকবে, আল্লাহ তা’আলা ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত করবেন না। (সহীহ মুসলিমঃ হা-৩৭৫-৩৭৬)
অপরদিকে ঈমানের গুরুত্ব সর্বাধিক এ কারণে যে, পৃথিবীর কোনো কিছুই ঈমান ছাড়া অর্থহীন। যত ভালো কিংবা পূণ্যের কাজ হোক না কেনো- এমনকি কেউ যদি সমগ্র পৃথিবীবাসীর সেবায়ও নিজেকে বিলিয়ে দেয়, কিন্তু তার মধ্যে ঈমান না থাকে, তাহলে এসব ভালো ও পূণ্যময় কাজের কোনো মূল্যই নেই। আখিরাতে এগুলোর কোনো বদলা পাওয়া যাবে না। কিন্তু কারো মাঝে যদি ঈমান থাকে এবং সে এ ঈমান নিয়ে আল্লাহ তা’আলার দরবারে হাযির হয়, কিন্তু তার কাছে কোনো ভালো কিংবা পূণ্যময় কাজ না থাকে, তাহলে এরপরও সে চিরকালীন শান্তি ও সফলতা লাভ করবে।
ঈমান সব কিছুর মূল বুনিয়াদ
ঈমানের মূল কালিমা হলো- لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ الله-
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই। মুহাম্মাদ আল্লাহ তা’আলার রাসূল।
এটা ঈমানের মূল কালিমা। এর ওপরই ঈমান ও ইসলামের মূল ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। আখিরাতে আল্লাহ তা’আলার সামনে সফলতা অর্জন করা কিংবা ব্যর্থ হওয়া এই কালিমার ওপর অর্থাৎ ঈমানের ওপর ভিত্তি করেই হবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি উক্ত কালিমার পূর্ণ বিশ্বাস এবং মূল শিক্ষা নিয়ে আল্লাহ তা’আলার সামনে উপস্থিত হবে, সে চিরকালের জন্য মুক্তি ও সফলতা লাভ করবে।
যদিও তার কাছে অন্য কোনো কিছুই না থাকে। অপরদিকে যে এই কালিমার বিশ্বাস ও শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হবে, তার কাছে ইহকাল ও পরকালের অন্য সব কিছু থাকলেও সে চিরকালের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ এবং ধ্বংস হয়ে যাবে।