প্রিয় মুসলিম জাতি!
দুনিয়ার তাবৎ মুনাফিক এবং তাদের দোসরদের জানিয়ে দিন যে, মুসলিম উম্মাহ এই মহা বিপদে কাফের মুশরিকদের দোষ চর্চা করা ও তাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করায় ব্যস্ত নয়, যেমনটা তারা এই করোনা মহামারীর সূচনা থেকেই প্রচার করে আসছে।
আর মুসলিমেরা এই অপেক্ষায় ও বসে নেই যে, কেবলমাত্র কাফেররাই তাদের করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক বা ঔষধ আবিষ্কার করে দিবে, যা বলে বলে এতদিন তারা আমাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছিলো এবং মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আসছিলো।।
তাদের জানিয়ে দিন যে, আমেরিকার যেই কোম্পানিটি সারা পৃথিবীব্যাপী ভেন্টিলেটর তথা কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র আবিষ্কার ও বিতরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, সেই কোম্পানি তথা- (Medtronic.com/openventilato) এর পরিচালক একজন মুসলিম ।

কিছুদিন আগে সে তার ইয়ার ল্যান্ডস্থ কোম্পানি থেকে এই করোনা ভাইরাসের মহাসংকটের দিক বিবেচনা করে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের জন্য সম্ভাব্য সবচাইতে বড় ধরনের এই মহামারী থেকে মানুষকে রক্ষা করবার জন্য ফ্রি ফ্রি ভেন্টিলেটর সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তাদেরকে আরও জানিয়ে দিন যে, জন হোবকিন্স ভার্সিটির গবেষকদের যে দলটি সবচেয়ে দ্রুত করোনাভাইরাস শনাক্তকারী টেস্ট কি তৈরির জন্য গবেষণা করছে, তাদের পরিচালনায় রয়েছেন হেবা মোস্তফা নামক একজন মিশরী মুসলিম মহিলা ডাক্তার ।
তাদের আরও জানিয়ে দিন যে, সারা বিশ্বে হাজার হাজার মুসলিম চিকিৎসক এই মুহূর্তে এই দুর্যোগ প্রতিরোধে সামনের সারিতে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ এদের অবস্থা অন্যদের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ।
আর ব্রিটেনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে সর্বপ্রথম যে চারজন ডাক্তার শহীদ হয়েছেন, তারা মুসলিম। অমুসলিমদের চিকিৎসা করতে করতেই যারা জীবন দিয়েছেন। তাঁরা হলেন আলফা সা’দু, আমজাদ আল-হাওরানি, আদিল আত-তাইয়ার ও হাবিব জায়েদি। তাঁরা আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে এসে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হন।

তাদেরকে আরও জানিয়ে দিন যে, ইসলামে ইস্তিঞ্জা বা টয়লেট করার পর পানি ব্যবহার করার নিয়ম (যা রয়েছে সেই শুরু থেকেই; যা দেখেই তথাকথিত ইউরোপ অ্যামেরিকার তথাকথিত সভ্যরা শুরু করলো মাত্র কয়েক বছর আগে) লাখ লাখ ইউরোপিয়ান ও অ্যামেরিকানদের সুরক্ষা পেতে সহযোগিতা করেছে, যখন পানি ব্যবহার না করে শুধুমাত্র টয়লেট পেপার ব্যবহারে মলদ্বারে ইনফেকশনের মতো সমস্যা দেখা দিলো। তখন তো হ্যান্ডপুশ (টয়লেটের সেই পাইপ যেটা দিয়ে টয়লেট বা ইস্তিঞ্জা শেষে পানি ব্যবহার করা হয়) কেনার হিড়িক পড়ে গেলো।
এমনকি শুধুমাত্র অ্যামাজন কোম্পানি তাদের স্টকে থাকা সমস্ত হ্যান্ডপুশ বিক্রি করে ফেলেছিলো প্রথম কয়েকদিনের ভেতরেই।
আরও জানিয়ে দাও যে, হোম কোয়ারেনটাইন পালন, চিকিৎসা উপকরণ ও বাস্তবিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার ব্যাপারে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেখে যাওয়া দিক নির্দেশনা গ্রহণের জন্যই এই মহাসংকটের সময় সবাই পরামর্শ দিচ্ছে, উপকৃত হচ্ছে।
আর মার্কিন অধ্যাপক ড. ক্রেগ কন্সিডাইন (যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অবস্থিত রাইস ইউনিভার্সিটির একজন গবেষক ) এমেরিকার নিওজ উইক নামক প্রসিদ্ধ পত্রিকায় মহামারী কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিক নির্দেশনা নিয়ে একটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রবন্ধ লিখেছেন, যেখানে তিনি দাবি করেছেন যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সর্বপ্রথম ১৪০০ বছর আগে রোগব্যাধি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন সম্পর্কে কথা বলেছেন, যেগুলো বর্তমানের আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান স্বীকৃতি দিচ্ছে মারাত্মক সব মহামারী থেকে প্রতিরক্ষা পাবার জন্য।
আর আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত মহামারী থেকে সুরক্ষা পাবার জন্য শুধুমাত্র নামাজ ও দোয়ার ভেতরেই ডুবে ছিলেন না, যেমনটা মুনাফিকরা ধারণা করে থাকে।
তাদেরকে আরো জানিয়ে দিন যে, সারা পৃথিবীর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ওলামায়ে কেরাম একাধারে আধুনিক বিজ্ঞান, ডাক্তারি ফর্মুলা ও সঠিক ফিকহী সিদ্ধান্তের সমন্বিত সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

পাশাপাশি তারা ওমরা, জুমার নামাজ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত আপাতত বন্ধ রেখেছেন। এমনকি তারা মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববী পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে তারা তোমাদের বন্ধুদের ইতালি-স্পেনসহ অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি আল-হামদুলিল্লাহ।
তাদের জানিয়ে দাও যে, এই মহামারীর উৎপত্তি হয়েছে এমন এক রাষ্ট্র থেকে, যারা আল্লাহ তাআলা ও আখেরাতে বিশ্বাস করে না। এমন দেশ থেকে, যারা মৃত বন্যপ্রাণী এবং সমস্ত ঘৃণিত প্রাণী খায়।

করোনার উৎপত্তি কোনো মুসলিম রাষ্ট্র থেকে হয়নি, কারণ তারা অজু করে, নিয়মিত গোসল করে, সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে এবং কেবলমাত্র হালাল ও পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করে।
তাদের জানিয়ে দাও যে, আমরা আল্লাহ তায়ালাকে রব হিসেবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী ও রাসুল হিসেবে এবং ইসলামকে ধর্ম হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।
আর যেসব লোকেরা আমাদের ওপরে বিভিন্ন ধরনের অপবাদ চাপিয়ে দেয়, তারা এই যুগের মুনাফিক। তারা যেন কেবলমাত্র সেগুলোই পরিবেশন করে, যাতে মানবজাতির মুক্তি আছে। আর যারা মানুষের মুক্তির পথ নির্মাণ করছে, তাদের সমর্থন ও শক্তির যোগান দেয়।
তারা যেন নিজেদের মুখ ও কলম বন্ধ রাখে। আসলে তারা শুধু এটাই চায় যে, মুসলিম জাতি তোমরা যদি কাফের হয়ে যেতে! (তাহলে তারা খুশি হতো।)
আরবী বয়ান: শায়েখ হাসান আল- হুসাইনী, বিশিষ্ট দাঈ, বাহরাইন, মধ্যপ্রাচ্য।
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ বিন মুস্তফা
এরাবিক মডেল মাদ্রাসা, উত্তরা, ঢাকা।