মুফতি মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া
দারুল ইফতা, মারকাজুদ দাওয়া আল ইসলামিয়া, ঢাকা
কুরবানী ওয়াজিব হওয়া না হওয়া বিষয়ক ভ্রান্তি
অনেকে মনে করেন, যাকাত ফরয হওয়ার জন্য যে ধরণের সম্পদ থাকা জরুরী, যথা- টাকা-পয়সা, সোনা রুপা, ব্যবসায়িক সম্পদ, তেমনই কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য এগুলো থাকা শর্ত। ফলে কোনো কোনো স্বচ্ছ পরিবারের লোকদেরকেও কুরবানী দিতে দেখা যায় না। এটা ভুল ধারণা।
সঠিক মাসআলা হলো- যে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নিকট কুরবানীর দিনগুলোতে সাড়ে ৫২ তোলা রূপার মূল্য পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে কোনো ধরণের সম্পদ থাকবে, তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি, সৌখিন বা অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, চাই তা ব্যবহৃত হোক বা না হোক- এসব কিছুও কুরবানীর নিসাবের হিসাবযোগ্য। তবে যাকাতের বেলায় এগুলো ধর্তব্য হয় না।
তাই টাকা-পয়সা, সোনা রুপা ও ব্যবসায়িক সম্পদ না থাকলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধন-সম্পদ এবং আসবাবপত্রের মূল্য নিসাব পরিমাণ হলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।
(বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/১৯৬; রদ্দুল মুহতারঃ ৬/৩১২;)
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার সময়
শুধু জিলহজ্জের ১০ তারিখে কুরবানীর নিসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হবে না বলে ধারণা করা হয়। ফলে জিলহজ্জের ১১ বা ১২ তারিখে কারো কাছে হঠাৎ কোনোভাবে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আসলে সে আর কুরবানী করে না। যথা-যে অবিবাহিত মেয়ের ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, কুরবানীর পরদিন তথা ১১ জিলহজ্জে তার বিয়ে হলো। সেদিন স্বামী তাকে স্বর্ণ, টাকা পয়সা ইত্যাদি দিলো- যা সাড়ে ৫২ তোলা রূপার পরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি।
তখন সে এই ভেবে কুরবানী করে না যে, কুরবানীর দিন তো অতিবাহিত হয়ে গেছে। এই ধারণা ভুল।
মাসআলা হলো, যিলহজ্জের ১০ তারিখ সুবেহ সাদিক থেকে ১২ তারিখ সুর্যাস্ত পর্যন্ত মোট তিন দিন কুরবানী করা যায়। এই তিন দিনের মধ্যে যে কোনো সময় কেউ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকেই কুরবানী দিতে হবে।
(নাসবুর রায়াঃ ৪/২১২-২১৩; বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/১৯৮; আদ্দুররুল মুখতারঃ ৬/৩১৮; আলমগীরীঃ ৫/২৯৫)
নিজের ওয়াজিব কুরবানী না দিয়ে মা-বাবার কুরবানী দেওয়া
ছেলে প্রতিষ্ঠিত হলে যখন মা-বাবা বার্ধক্যে পৌঁছে যায় এবং তাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়, তখন ছেলে শুধু তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়। অথচ তার নিজের ওপর কুরবানী ওয়াজিব। সে নিজের ওয়াজিব কুরবানী আদায় না করে মা-বাবর কুরবানী দেয় এবং মনে করে, এর দ্বারা তার দায়িত্ব্ আদায় হয়ে গেছে। এটা ভুল ধারণা।
ছেলের ওপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে থাকলে নিজের কুরবানী অবশ্যই দিতে হবে। এরপর সামর্থ থাকলে ইচ্ছা হলে মা-বাবার পক্ষ থেকেও ভিন্ন কুরবানী দিতে পারবে। অবশ্য কেউ নিজের ওয়াজিব কুরবানী আদায়ের ক্ষেত্রে মা-বাবাকে সাওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করলে তার ওয়াজিব কুরবানী আদায় হয়ে যাবে এবং মা-বাবাও সাওয়াব পেয়ে যাবেন।

যৌথ পরিবারে শুধু কর্তার কুরবানী
যৌথ পরিবারে অনেক ক্ষেত্রে একাধিক উপার্জনকারী থাকে। যাদের প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন মালিকানাধীন সম্পদ রয়েছে। কিন্তু যৌথ পরিবার বিধায় শুধু কর্তার কুরবানীই দেওয়া হয়। প্রত্যেক উপার্জনকারীর কুরবানী দেওয়া হয় না। এটা ভুল ধারণা।
যৌথ পরিবার হোক বা ভিন্ন পরিবার হোক- প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব। যৌথ পরিবারের কর্তার কুরবানী দিলে তা পরিবারস্থ সকলের জন্য যথেষ্ট হবে না।
অধিক মূল্যের বা সবচেয়ে বড় পশু ক্রয়ের প্রতিযোগিতা
আজকাল বিত্তবান লোকদের মধ্যে কে কত বেশি মূল্যের পশু কিনতে পারে কিংবা কার কুরবানীর পশু কতো বড় হবে- এ নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে উট ক্রয় করার প্রতিযোগিতা হয়। পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে নাম ছাপা হতেও দেখা যায়। কোনো কোনো সময় এই ধরণের নজড়কাড়া পশু এলাকায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্রদর্শন করাও হয়। এসব হলো চরম পর্যায়ের মূর্খতা।
কুরবানী কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইবাদতের জন্য প্রথম শর্ত হলো- ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্য করা। নিজের বড়ত্ব প্রকাশ, লোকজনের বাহবা পাওয়া, লোক দেখানো মনোভাব ইত্যাদি থাকলে ওই ইবাদত কবুল হবে না।
অবশ্য এই কথা কারো অজানা নয় যে, শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলাকে সন্তুষ্ট করার নিয়তে কুরবানী করার ক্ষেত্রে কুরবানীর পশু যত বড় হবে এবং যত উন্নত হবে, তত বেশি নেকী হবে।
কুরবানী করার নিয়তে পশু ক্রয় করার পরে শরিক নেওয়া
যদি শরিকে কুরবানী করতে হয়, তাহলে পশু ক্রয় করার আগেই শরিক নির্ধারণ করে নেওয়া উত্তম। এটা সম্ভব না হলে অন্তত ক্রয়ের আগে অন্য শরিক অন্তর্ভুক্তির নিয়ত করে নিবে। পরে কোনো শরিক পাওয়া গেলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তু অনেক সময় এমন হয় যে , ক্রয়ের সময় একা কুরবানী দেওয়ার জন্য পশু কুরবানী করে, অতঃপর কোনো কারণে অন্যকে শরিক করতে হয়- এই অবস্থায় মাসআলা কি হবে, তা অনেকেরই জানা নেই। তাই মাসআলাটি লিখা হলো।
পশু ক্রয়কারী ব্যক্তি যদি এমন হয়- যার ওপর কুরবানী ওয়াজিব, তো যদিও তার জন্য পরবর্তীতে কাউকে শরিক করার সুযোগ আছে, কিন্তু এমনটা না করাই উত্তম। এমন করলে অন্যান্য শরিকদের অংশ পরিমাণ সদকা করে দেওয়া উত্তম।
যদি একা কুরবানী করার উদ্দেশ্যে পশু ক্রয়কারী ব্যক্তি এমন হয়- যার ওপর কুরবানী ওয়াজিব ছিলো না। তার জন্য অন্য কাউকে ওই পশুর মধ্যে শরিক করা জায়েয নেই। কেননা তার ওপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। সে যদি কুরবানীর পশু ক্রয় করে এবং ক্রয়ের সময় অন্য কাউকে শরিক করার নিয়ত না থাকে, তাহলে তার একা পুরো পশুই কুরবানী করা আবশ্যক। যদি মাসআলা না জানার কারণে বা অন্য কোনো কারণে দ্বিতীয় কাউকে শরিক করে নেয়, তাহলে সে পরিমাণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে।
(কাযী খানঃ ৩/৩৫০-৩৫১; বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/২১০; রদ্দুল মুহতারঃ ৬/৩১৭; তাহতাবী আলাদ্দুরঃ ৪/১৬২)
শরিক নির্বাচনে অসতর্কতা
অনেকে মনে করেন, সাতজনের কমে শরিক নেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে মনে করা হয়, হয়তো একা কুরবানী করতে হবে নতুবা শরিক নিতে হলে সাতজন পূর্ণ করতে হবে। এই ধারণা ভুল।
এমনিভাবে কেউ কেউ শরিক সংখ্যা বেজোড় হওয়া জরুরী মনে করেন। এটাও ভুল ধারণা। সাত বা সাতের কমে যে কোনো সংখ্যক শরিক নেওয়া যেতে পারে।
ত্র“টিযুক্ত কুরবানীর পশু
অনেকে মনে করেন, পশুর শিং অল্প স্বল্প ভাঙ্গা থাকলেই ওই পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না। তদ্রুপ যে পশুর শিং উঠেনি, সে পশু দ্বারাও কুরবানী হবে না। এই ধারণা ঠিক নয়।
সহীহ মাসআলা হলো, যে পশুর শিং একেবারেই গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিস্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সে পশুর দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নেই। পক্ষান্তরে যে পশুর শিং আংশিক ভেঙ্গে গেছে কিংবা শিং একেবারেই উঠেনি, সে পশু দারা কুরবানী করা জায়েয।
(সুনানে তিরমিযিঃ ১/২৭৬; সুনানে আবি দাউদঃ ৩৮৮; বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/২১৬; রদ্দুল মুহতারঃ ৬/৩২৪; আলমগীরীঃ ৫/২৯৭)
অন্তঃস্বত্ত্বা পশুর কুরবানী
অনেকে অন্তস্বত্ত্বা পশুর কুরবকানী না-জায়েজ মনে করে থাকে। অথচ এই ধারণা সহীহ নয়। এই ধরণের পশু কুরবানী দেওয়া জায়েজ। তবে বাচ্চা দেওয়ার সময় আসন্ন হলে সেটা কুরবানী করা মাকরূহ।
(কাযী খানঃ ৩/৩৫০; ফতোয়ায়ে আলমগীরীঃ ৫/৩০২)
কুরবানী পশু যবেহ করা সম্পর্কিত ভ্রান্তি
হুজুরকে দিয়ে যবেহ করানো জরুরী মনে করা। অনেকেই কুরবানীর পশু মসজিদের ইমাম বা হুজুরকে দিয়ে যবেহ করানো জরুরী মনে করে। অথচ এটা মারাত্মক ভুল ধারণা। কুরবানী দাতা যবেহ করতে জানলে নিজেই যবেহ করা উত্তম।
(মুসনাদে আহমাদঃ হা-২২৬৫৭; আলমগীরীঃ ৫/৩০০; ইলাউস সুনানঃ ১৭/২৭১-২৭৪; বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/২২২)
কুরবানীর আগে শরিকদের নাম পড়া
সাধারণত কুরবানীর আগে সকল শরিকের নাম পিতার নামসহ পড়াকে জরুরী মনে করা হয়। ফলে অধিকাংশ জায়গায় পশুকে শুইয়ে বেঁধে যবেহ করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুত করার পরও যবেহকারীকে ওই নামের তালিকা পড়তে দেখা যায়। এ কাজটি নিতান্তই ভুল।
শরিকদের নাম পড়া জরুরি নয়। এমনকি যবেহকারী শরিকদের কথা না জেনে যবেহ করলেও সকল শরিকের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। কেননা কাদের কুরবানী করা হচ্ছে- সেটা তো নির্দিষ্ট আছে। এখন যবেহ করার মূহুর্তে নামের তালিকা উচ্চারণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। যবেহ করার আগে এভাবে নাম উচ্চারণ করা সালাফ থেকে প্রমাণিত নয়। আর এমন অপ্রয়োজনীয় একটি কাজের জন্য পশুকে যবেহ করার আগে কতই না কষ্ট দেওয়া হয়।
যবেহ করার সময় দ্বিতীয় ব্যক্তির সহযোগিতা
অনেক ক্ষেত্রে যবেহকারী যবেহ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে কসাই বা অন্য কেউ এসে ছুরি ধরে এবং যবেহ পূর্ণ করে। কিন্তু এক্ষেত্রে দিতীয় ব্যক্তিকে বিসমিল্লাহ পড়তে শোনা যায় না।
যদি প্রথম ব্যক্তির যবেহ সম্পন্ন না হয় (অর্থাৎ দুটি শাহ রগ, শ্বাসনালী ও খাদ্যনালী-এ চারটির কমপক্ষে তিনটি কাটা না হয়) তাহলে দ্বিতীয়জনকে অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলতে হবে। অন্যথায় যবেহ সহীহ হবে না। এমতাবস্থায় ওই পশুর গোশত খাওয়া হালাল হবে না।

অপারগতা ছাড়া ১১ বা ১২ তারিখে কুরবানী করা
সাধারণত যাদের একাধিক কুরবানী থাকে, তাদেরকে ১০ তারিখে একটা এবং ১১ বা ১২ তারিখে অন্যটা কুরবানী করতে দেখা যায়। এমন করা ঠিক নয়। বিনা অপারগতায় প্রথম দিন কুরবানী না করে পরে কুরবানী দেওয়া অনুত্তম।
(রদ্দুল মুহতারঃ ৬/৩৩৪; মুয়াত্তা মালেকঃ ১৮৮; বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/১৯৮; আলমগীরীঃ ৫/২৯৫)
পশু নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া ছিলা
অনেকেই পশু নিস্তেজ হওয়ার আগেই পায়ের রগ কাটা ও চামড়া ছিলা শুরু করে। এতে পশু কষ্ট পায়। এটা মাকরূহ। পশুকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কষ্ট দেওয়াই গুনাহ।
(সুনানে তিরমিযীঃ ১/২৬০; সুনানে আবি দাউদঃ ২/৩৩; আলমগীরীঃ ৫/২৮৭)
অনুমান করে গোশত বন্টন করা
অনেকে শরিকে কুরবানী দিলেও গোশত অনুমান করে বন্টন করে থাকে। অথচ শুধু অনুমান করে বন্টন করা না-জায়েয।
(কাযী খানঃ ৩/৩৫১; আদ্দুররুল মুখতারঃ ৬/৩১৭)
গোশত ওযন করাকে সংকীর্ণতা মনে করা
অনেকে ওযন করে বন্টন করাকে খুব অপছন্দ করে। এটাকে সংকীর্ণতা বা বাড়াবাড়ি ইত্যাদি বলে কটাক্ষ করে। অথচ এটা শরীয়তের হুকুম। না জেনে এমন মন্তব্য করা ঠিক নয়।
তিন ভাগ করা জরুরী মনে করা
অনেকে গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজে রেখে, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও এক ভাগ ফকির-মিসকীনকে দেওয়া জরুরী মনে করেন। অথচ এভাবে বন্টন করা আবশ্যক নয়, তবে উত্তম।
কেউ এতে ত্র“টি করলে এতে গুনাহ হবে না এবং কুরবানীরও কোনো ক্ষতি হবে না। কেউ কেউ কুরবানীর সম্পূর্ণ গোশত ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখে, কিছুই দান করে না। এটা ঠিক নয়, অনুত্তম।
(সূরা হজ্জঃ আ-৩৬; বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/২২৪; আলমগীরীঃ ৫/৩০০)
কুরবানীর গোশত বিধর্মীদের দেওয়া
অনেকে মনে করে, কুরবানীর গোশত হিন্দু বা বিধর্মীদেরকে দেওয়া জায়েজ নেই। এই ধারণা ভুল। বিধর্মীদেরকেও কুরবানীর গোশত দান করা জায়েয।
(ইলাউস সুনানঃ ১৭/২৮৩; আলমগীরীঃ ৫/৩০০)

ভৃত্য ও কাজের লোকদেরকে কুরবানীর গোশত দেওয়া
অনেকে কাজের লোকদেরকে কুরবানীর গোশত দেওয়া ও খাওয়ানোকে না-জায়েয মনে করে। অথচ তাদেরকে পারিশ্রমিক হিসেবে না দিয়ে হাদিয়া দিলে কোনো অসুবিধা নেই।
এছাড়া অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের মতো এদেরকেও কুরবানীর গোশত দেওয়া উচিত। তবে এটা তার নির্ধারিত পারিশ্রমিক থেকে ভিন্নভাবে দিতে হবে।
চর্বি বিক্রি করা
কুরবানীর পর রাজধানী ঢাকা সহ পুরো দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুরবানীর পশুর চর্বি ক্রয়-বিক্রয় হয়। অথচ কুরবানীর গোশত ও চর্বি বিক্রি করা না-জায়েয। কেউ বিক্রি করলে পুরো টাকা মিসকীনদেরকে সদকা করে দিতে হবে।
(ইলাউস সুনানঃ ১৭/২৫৯; বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/২২৫; কাযী খানঃ ৩/৩৫৪; আলমগীরীঃ ৫/৩০১)
কুরবানীর দিনগুলোতে অন্য পশু যবেহ করা
অনেকের ধারণা, কুরবানীর তিন দিন কুরবানীর পশু ছাড়া অন্য কোনো পশু যবেহ করা যাবে না। এমনকি হাঁস-মুরগী বা গরু-ছাগলও নয়। এটাও ভুল ধারণা।
কুরবানীর নিয়তে হাঁস মুরগী ইত্যাদি (যেগুলো দ্বারা কুরবানী সহীহ নয়) যবেহ করা ধনী-গরীব সকলের জন্যই না-জায়েয। তবে গোশত খাওয়ার প্রয়োজনে যবেহ করতে কোনো সমস্যা নেই।
(খুলাসাতুল ফাতাওয়াঃ ৪/৩১৪; বাযযাযিয়াঃ ৬/২৯০; আদ্দুররুল মুখতারঃ ৬/৩১৩; আলমগীরীঃ ৫/৩০০)
আকীকা না দিয়ে কুরবানী করা
অনেকের ধারণা, আকীকা না দিলে কুরবানী দেওয়া যায় না। তাই অনেকে কুরবানীই করেন না। আবার অনেকের ওপর কুরবানী ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও কুরবানী না দিয়ে আকীকা দেন। অথচ এটা একেবারেই অমূলক।
কুরবানী ও আকীকা একটার সঙ্গে অপরটি শর্তযুক্ত নয়। তাই কোনো কারণে আকীকা না দেওয়া হলেও ওয়াজিব কুরবানী অবশ্যই দিতে হবে।
অনাদায়ী কুরবানী
বিগত বছরের কুরবানী অনাদায়ী থাকলে অনেকেই পরবর্তী বছর কুরবানী দিয়ে থাকেন। অথচ এভাবে বিগত বছরের কুরবানীর কাযা আদায় হয় না। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো প্রতি বছরের কুরবানীর জন্য অন্তত কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা।
(খুলাসাতুল ফাতাওয়াঃ ৪/৩১১, মাবসুতে সারাখসীঃ ১২/১৪; বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/২০২; আদ্দুররুল মুখতারঃ ৬/৩২০; ফাতহুল কাদীরঃ ৮/৪৩২)
হাজী সাহেবের নামে কুরবানী
অনেক হাজী সাহেব দেশে তার কুরবানীর ব্যবস্থা করে যান। এটাকে তারা জরুরী মনে করেন। এক্ষেত্রে মাসআলা হলো, যে হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবেন, তার ওপর সাধারণ কুরবানী জরুরী হয় না। তবে হ্যাঁ, এরপর যদি কেউ নফল হিসেবে কুরবানী দিতে চান, তবে সেটা ভালো কথা।
পক্ষান্তরে কোনো হাজী যদি মক্কায় হজ্জের আগে ১৫ দিন থাকার নিয়তে অবস্থান করে থাকে, তাহলে সে কুরবানীর দিনে যেহেতু মুকীম, তাই কুরবানী দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে তার ওপর সাধারণ কুরবানী করাও ওয়াজিব হবে।
উল্লেখ্য, সাধারণ কুরবানী বলতে উদ্দেশ্য যা সকল সামর্থ্যবান ব্যক্তিই করে থাকেন। আর হজ্জের কুরবানীর মাসআলা হলো, তামাত্তু ও কিরান হজ্জে কুরবানী করা (দমে শুকুর) ওয়াজিব। আর ইফরাদ হজ্জে কুরবানী করা নফল।
(কাযী খানঃ ৩/৩৪৪; বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/১৯৫; আদ্দুররুল মুখতারঃ ৬/৩১৫)
যবেহ করার আগে চামড়া বিক্রি করা
অনেক সময় চামড়া ক্রেতাদের পিড়াপিড়িতে পশু যবেহ করার আগেই চামড়া বিক্রি করে ফেলে। এমনকি মূল্যও নিয়ে নেয়। এমনটি করা না-জায়েয। চামড়া ছিলার আগে তা বিক্রি করা জায়েয নয়। তাই প্রয়োজনে যবেহ করার আগে ওয়াদা করা যেতে পারে, কিন্তু বিক্রি করা যাবে না।
(ফতোয়ায়ে আলমগীরীঃ ৩/১২৮; আদ্দুররুল মুখতারঃ ৫/৬৩)