মানবজাতির দায়িত্বে অর্পিত বিশেষ দু’টি বিষয়ের ওপর পূর্ণ আমল এবং সার্বিক বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য ইলম বা জ্ঞানের প্রয়োজন। কেননা একদিকে যেমন সৃষ্টি জগতের তত্ত্ব ও রহস্য এবং প্রকৃতির বুকে ছড়ানো প্রতিটি বস্তুর গুণ-বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার পদ্ধতির সঠিক জ্ঞান ব্যতীত বিশ্বজগত দ্বারা উপকৃত হওয়া সম্ভব নয়, অপরদিকে তেমনি আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ কোনটি, কোন কোন কাজ করলে তিনি খুশি হন, আর কোন কোন কাজ করলে তিনি অসন্তুষ্ট হন; এসব বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ ইলম ও জ্ঞান না থাকলে আল্লাহর সন্তুষ্টি মুতাবেক জীবন-যাপন করাও সম্ভব হবে না। তাই উপরোক্ত দুটি বিষয়ে অবগতি লাভ করতে হলে মানব জীবনে ইলম ও জ্ঞানের অপরিহার্যতা অস্বীকার করা যায় না।
মূলতঃ ইলম ও জ্ঞানের অর্থই হচ্ছে অজানাকে জানা, মানবের জ্ঞান সীমার বহির্ভূত বিষয়সমূহ অবহিত হওয়া, এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল দিক সম্পর্কে অবগত হওয়া। এই জ্ঞানের মাধ্যমেই মানব মনের পুঞ্জীভূত অন্ধাকার বিদূরিত হতে পারে, ইলমের অত্যুজ্জ্বল মহিমায় হৃদয়মন আলোকিত হতে পারে।
ইলম অর্জনের মাধ্যম
কিন্তু এই জ্ঞানের জন্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত প্রকৃত তথ্যের প্রয়োজন। অন্যথায় তা মানবের কল্যাণ সাধনে অক্ষম হয়ে যাবে। এরই ওপরই পুরো জীবন জগতের সার্থকতা নির্ভর করে। আর এটা অনির্ভরযোগ্য জ্ঞানের দ্বারা মোটেও সম্ভব নয়। তাই মানুষের ইহকাল ও পরকালের কামিয়াবীর জন্য এমন ইলম ও জ্ঞানের প্রয়োজন- যা একদিকে যেমন হবে সম্পূর্ণ সত্য ও নির্ভরযোগ্য, অপরদিকে হবে তেমনি অকাট্য ও নিশ্চিত সূত্রে প্রাপ্ত।
তাই মানব সৃষ্টির সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলা এমন তিনটি মাধ্যম ও সূত্রও সৃষ্টি করেছেন, যেগুলির মাধ্যমে তারা উপরোক্ত বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। সেগুলো হলো-
প্রথম. মানুষের পঞ্চেন্দ্রিয় অর্থাৎ চোখ, কান, মুখ ও হাত-পা। এটা বাহ্যিক ও প্রাথমিক সূত্র।
দ্বিতীয়. মানুষের অন্তর্নিহিত বিবেক-বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, চিন্তা-গবেষণা ও বিচার-বিবেচনা।
তৃতীয়. ওহি (ঐশীবাণী)। যা জ্ঞান আহরণের সর্বোচ্চ সূত্র এবং সর্বতোভাবে নির্ভুল ও অকাট্য এবং সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত ও নির্ভরযোগ্য।
মানুষ অনেক বিষয়ে তার ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করে থাকে এবং অনেক বিষয়ে বুদ্ধির মাধ্যমে অর্জন করে থাকে। আর যে সকল বিষয়ে এই দুটোর মাধ্যমে জ্ঞানলাভ করা সম্ভব হয় না, সেগুলোর বিষয়ের জ্ঞান ওহির মাধ্যমে দান করা হয়।
ইলম অর্জনের তিনটি মাধ্যমের ক্রমবিন্যাস
ইলম ও জ্ঞানের এই তিনটি মাধ্যমের ভিতর আবার ক্রমবিন্যাস রয়েছে এবং প্রত্যেকটির বিশেষ সীমা ও স্বতন্ত্র কর্মক্ষেত্র রয়েছে। এর বাইরে তা কোনো কাজে আসে না।
– পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারা অর্জিত জ্ঞান
জ্ঞান অর্জনের এই তিন মাধ্যমের যেমন পর্যায়ক্রমে বিন্যস্ত, তেমনি নিজ নিজ নির্দিষ্ট পরিমন্ডলে সীমিত এবং নির্দিষ্ট সীমারেখার বাইরে এগুলির কোনোটিকেই কার্যকারিতা থাকে না, তাই পঞ্চেন্দ্রিয় সূত্রে যে জ্ঞান অর্জিত হয়, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা সেখানে কোনো কাজ দেয় না। সুতরাং মানুষ যেসব বিষয় স্বীয় ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অবগত হয়, তার জ্ঞান কেবল বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা অর্জন করা যায় না। আবার যেসব বিষয় বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা অর্জন করে, সেগুলোর অনেক কিছু শুধু পঞ্চেন্দ্রিয় সূত্রে জানতে সক্ষম হয় না।
উদাহরণতঃ একটি সাদা দেয়াল চোখ দ্বারা দেখে আপনি জানতে পারেন, সেটির রং সাদা। কিন্তু আপনি যদি চোখ বন্ধ করে কেবল বিবেক-বুদ্ধির সাহায্যে দেয়ালটির রং জানতে চেষ্টা করেন, তবে সে চেষ্টায় আপনি কখনো সফল হবেন না।
– বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা অর্জিত জ্ঞান
এমনিভাবে যেসব বিষয়ের জ্ঞান বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা অর্জিত হয়, কখনো শুধুমাত্র ইন্দ্রিয় দ্বারা তার জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়।
উদাহরণতঃ আপনি যদি চোখ দ্বারা দেখে বা হাত দ্বারা ছুঁয়ে জানতে চান, এই দেয়ালটির নির্মাতা বলতে কেউ একজন আছে অথবা এই দেয়ালটি কে নির্মাণ করেছে, তবে আপনি কখনো তাতে সমর্থ হবেন না; বরং এটা জানার জন্য বিবেক-বুদ্ধির প্রয়োজন হবে।
অতএব বোঝা গেলো, পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারা যে পর্যন্ত জ্ঞান আহরণ করতে পারে, বুদ্ধির সেখানে প্রয়োজন পড়ে না। আর পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারা অর্জিত জ্ঞানের সীমা যেখানে শেষ, বুদ্ধির কার্যকারিতা সেখান থেকেই শুরু।
– ওহির জ্ঞান
এরপর মানুষ পঞ্চেন্দ্রিয় সূত্রে অনেক কিছু জানতে পারে। অন্তর্নিহিত বুদ্ধি, প্রজ্ঞা ও চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমেও সে অনেক ইলম ও জ্ঞানতথ্য আহরণ করে; কিন্তু এই বুদ্ধির কার্যকারিতাও আবার সীমাহীন নয়, এক পর্যায়ে এসে বুদ্ধিরও পরিসমাপ্তি ঘটে।
তাই দেখা যায়, এমন অনেক তথ্য ও জিজ্ঞাসা রয়েছে, যেগুলির রহস্য উদঘাটন করতে এবং সমাধান দিতে গিয়ে বুদ্ধি- এমনকি বুদ্ধি ও অনুভূতির সম্মিলিত শক্তিও ব্যর্থ হয়েছে। তাই যেসব বিষয় মানবীয় বুদ্ধি-প্রজ্ঞা ও চিন্তা-গবেষণারও ঊর্ধ্বে, আল্লাহ তা’আলা সেসব বিষয় শিক্ষা দেওয়ার জন্যই মানুষকে ওহির সূত্র দান করেছেন।
ওহির এই সূত্রকেই পারিভাষিক অর্থে ইলম বলা হয়। এই ওহি সূত্রের মাধ্যমেই মানুষ তার বোধগম্য জগতেরও বহু ঊর্ধ্বে জগতের ইলম ও জ্ঞানলাভ করতে সক্ষম হয়।
উদাহরণতঃ যদি চিন্তা করা হয়, মানবজাতিকে এই পৃথিবীতে সৃষ্টি করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে তার প্রতি কী কী দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পিত হয়েছে? তার কোন কোন কাজ আল্লাহ তা’আলার নিকট পছন্দ, আর কোন কোন কাজ অপছন্দ? তাহলে এসব প্রশ্নের উত্তর পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারা অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধির মাধ্যমে জানা সম্ভব হয় না। বুদ্ধি ও অনুভূতি সম্মিলিত ভাবেও এর সমাধান দিতে সক্ষম নয়।
অতএব এই ধরণের বুদ্ধি-অভিজ্ঞতা, চিন্তা-গবেষণা ও ইন্দ্রিয়ানুভূতির অতীত বিষয়াবলী এবং নানা প্রশ্নের নির্ভুল ও নিশ্চিত সমাধান দেওয়ার জন্যই ওহির সর্বোচ্চ জ্ঞান-সূত্রের প্রয়োজন।
জ্ঞান অর্জনের তিন সূত্রের পারস্পরিক পর্যালোচনা
এক.
পঞ্চেন্দ্রিয় ও মানবীয় জ্ঞান-অভিজ্ঞতা একদিকে যেমন নির্দিষ্ট পরিমন্ডলে সীমিত; নির্দিষ্ট পরিধির বাইরে জ্ঞানতথ্য প্রদান করা এদের পক্ষে অসম্ভব, অপরদিকে জ্ঞান অর্জনের এ দুই সূত্র নির্ভুল ও সম্পূর্ণ সংশয়মুক্ত তথ্য দিবে, তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। এগুলো মানুষকে অনেক সময় ভুল তথ্য দিয়েও থাকে। কখনো কখনো এতে মানুষ বিভ্রান্তও হয়।
যথা- ইন্দ্রিয়ের বেলায়- মানুষ রোগাক্রান্ত হলে তার রুচি বিকৃতি ঘটে, মুখ বিস্বাদ হয়। তাই মিষ্টি বা ভিন্ন স্বাদের কোনো দ্রব্য তার নিকট তিক্ত অথবা বিপরীত প্রকৃতির অর্থাৎ পানসা-টক, লবণাক্ত ইত্যাদি অনুভূত হয়। এমনিভাবে দ্রুত গতিশীল রেল গাড়ীর আরোহীর দৃষ্টি বিভ্রান্ত হয়। ফলে দুই পার্শ্বের স্থায়ী দন্ডায়মান দৃশ্যাবলী দূরন্ত গতিতে ধাবমান বলে অনুভূত হয়। অপরদিকে চলমান জাহাজকে স্থির বলে অনুভূত হয়।
দুই.
জ্ঞানার্জনের দ্বিতীয় সূত্র ‘মানবীয় বুদ্ধি-বিবেচনা ও চিন্তা-গবেষণা’ও মূলতঃ পঞ্চেন্দ্রিয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই নতুন বিষয়ে তথ্য প্রদান করে থাকে। মানুষের ঊর্ধ্বারোহণের ক্ষমতা তার যতই উঁচু আর বিচরণসীমা তার যতই প্রশস্ত হোক না কেনো, তবুও একদিকে তা যেমন সীমিত অন্যদিকে তেমনি সম্পণূ নির্ভুল ও সংশয়মুক্তও নয়।
তবে বস্তুজগত থেকে সংগৃহীত তথ্যভিত্তিক জ্ঞান অনেকটা সন্দেহবিমুক্ত হতে পারে- আর এরই উপর বস্তু বিজ্ঞানের (চযরংরপধষ ঝপরবহপব) মূলভিত্তি। কিন্তু বস্তু-অতীত তথ্য-ভিত্তিক জ্ঞান শুধুমাত্র ধারণা-অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এ থেকেই যাবতীয় মানব-রচিত মতাদর্শ ও দর্শনের উৎপত্তি। এ যেমন সম্পূর্ণ সন্দেহমুক্ত নয়, তেমনি এতে পরিবর্তন কিংবা মতানৈত্য হওয়ারও যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
যথা- পৃথিবীতে একই বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে একাধিক বিজ্ঞানীদের তথ্যে কিংবা মতামতে মিল পাওয়া যায় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রথমে তারা এক রকম তথ্য প্রদান করলেও পরবর্তীতে তারা নিজেরাই আগের মত থেকে সরে গিয়ে ভিন্ন মত অথবা সিদ্ধান্ত দেন। এই পরস্পরবিরোধী উভয় যুক্তি অথবা সিদ্ধান্ত দেওয়ার প্রবণতা বিবেক-বুদ্ধি থেকেই অস্তিত্ব লাভ করেছে। এর দ্বারা বোঝা গেলো, নিছক বুদ্ধি দ্বারা সকলের পক্ষে সন্তোষজনক কোনো সমাধানে আসা জটিল ব্যাপার।
কারণ পঞ্চ ইন্দ্রিয় যে পরিমন্ডলে কাজ করে, তার ভিতর বুদ্ধি কোনো পথ নির্দেশ করে না। অতঃপর পঞ্চেন্দ্রিয় যেখানে অক্ষম হয়ে যায়, সেখান থেকে বুদ্ধির কাজ শুরু হয়। আবার বুদ্ধির পরিধিও অন্তহীন নয়। একটা সীমায় গিয়ে বিবেক-বুদ্ধি কিংবা গবেষণাও থেমে যেতে বাধ্য হয়। এই জগতে বহু বিষয় এমন রয়েছে, যে সম্পর্কে পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারাও জ্ঞান লাভ করা যায় না এবং বুদ্ধি গবেষণা দ্বারাও সম্ভব হয় না।
এ জাতীয় প্রশ্নের সমাধানের জন্য আল্লাহ তা’আলা মানুষের জন্য যে মাধ্যম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তারই নাম ‘ওহি’। এর পদ্ধতি হলো- আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে কাউকে বাছাই করে তাঁকে নবী বানিয়ে দেন এবং তাঁর প্রতি স্বীয় বাণী নাযিল করেন। তাঁর সেই বাণীকেই ওহি বলা হয়।
তিন.
জ্ঞান অর্জনের প্রথম দুই সূত্র তথা পঞ্চেন্দ্রিয় ও মানবিক চিন্তা-বুদ্ধির সীমাবদ্ধতা ও অক্ষমতার কারণে ওহির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য ও অনস্বীকার্য। মূলতঃ এই ওহিই (ইলম) আল্ল¬াহ তা’আলা প্রদত্ত জ্ঞান অর্জনের সেই মহান সূত্র, যা সর্বোতভাবে নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য তথ্য আহরণের সর্বশেষ সীমা। যার মাধ্যমে মানুষ জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে প্রকৃত হিদায়াত ও পথ নির্দেশ পেতে পারে এবং সকল প্রশ্নের সন্দেহাতীত ও নির্ভুল মীমাংসায় উপনীত হতে পারে। ইন্দ্রিয় সূত্রে প্রাপ্ত জ্ঞান-অভিজ্ঞতা অথবা বিবেক-বুদ্ধির প্রখরতা যেখানে সম্পূর্ণ অপারগ।
প্রকৃতপক্ষে এটা এমন এক ক্ষেত্র, যেখানে আমাদের ইন্দ্রিয় শক্তি কোনো মীমাংসা দেওয়ার যোগ্যতা রাখে না এবং আমাদের বিবেক-বুদ্ধিও কোনো সর্বগ্রাহ্য সমাধান দিতে পারে না। এরূপ ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলার সেই হিদায়াত ও পথনির্দেশ ছাড়া কোনো গতি থাকে না, যা তিনি স্বীয় নবীগণের প্রতি ওহি নাযিলের মাধ্যমে মানবতাকে সরবরাহ করে থাকেন।
সুতরাং বিচার-বুদ্ধির সীমা যেখানে শেষ, এর মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানেরও যেখানে পরিসমাপ্তি, তারও ঊর্ধ্ব থেকে যেহেতু ওহির কার্যকারিতা শুরু হয়; তাই একথা স্পষ্ট ও অনস্বীকার্য যে, ওহির বিষয়বস্তু শুধু বুদ্ধির মাপকাঠিতে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। এই ওহির সূত্রে কখনোই কোনো ধরণের মতানৈক্যের অবকাশ নেই।
তাই দ্বীনি আকীদা ও আহকামের বহু বিষয় ওহির জ্ঞানের দ্বারাই বুঝতে হবে। এ সংশ্লি¬ষ্ট অজ্ঞতা ও সন্দেহের পুঞ্জীভূত অন্ধকার ওহির আলোকেই দূরীভূত করতে হবে, হৃদয়স্থল ও মস্তিষ্ককে সর্বোতভাবে এই সত্য ও নির্ভরযোগ্য এবং অকাট্য ও নিশ্চিত জ্ঞানের মহিমায় আলোকিত করতে হবে।