মদিনায় ইয়াজিদ বিন মুআবিয়ার আক্রমণ
যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে অনেক সময় মক্কা ও মদিনার দুই মসজিদে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত বন্ধ ছিল। ৬৩ হিজরিতে ইয়াজিদ বিন মুআবিয়া (রা.)-এর বিরুদ্ধে মদিনাবাসী বিদ্রোহ করে। প্রখ্যাত হাদিসবিশেষজ্ঞ আল্লামা কাজি ইয়াজ (রহ.) (মৃত্যু : ৫৪৪ হি.) ওই সময় মদিনায় ইয়াজিদের বাহিনীর কৃত তাণ্ডবলীলার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, ইয়াজিদের বাহিনী মদিনাবাসীকে পরাস্ত করে হত্যা করা শুরু করে। তিন দিন পর্যন্ত হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে। এ সময় আনসার ও মুহাজিরসহ অনেক সাহাবির সন্তানরা নিহত হয়। ওই সময় মসজিদ-ই-নববীতে নামাজ বন্ধ থাকে। এমনকি আজানও হয়নি তখন।’
(ইকমালুল মুলিম বিফাওয়ায়িদি মুসলিম, ৬/২৬১)
মক্কা ও মদিনায় ইসমাইল উখাইদির সাফফাকের আক্রমণ
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ আবদুল মালিক ইসামি আল মক্কি (মৃত্যু : ১১১১ হি.) বর্ণনা করেন, ‘ইসমাইল উখাইদির মক্কায় প্রবেশ করলে সেখানকার আব্বাসি খলিফার গভর্নর পালিয়ে যান। তাই ইসমাইল এসে তাঁর ঘরে আক্রমণ করে ও মানুষের সম্পদ লুটতরাজ করে। দীর্ঘদিন অবস্থান করে মদিনায় গেলে সেখানকার গভর্নরও পালিয়ে যান। সেখানেও সব কিছু ধ্বংস করে। এ সময় প্রায় ১৫ দিন পর্যন্ত মসজিদ-ই-নববীর নামাজ বন্ধ থাকে। (সামতুন নুজুম আওয়ালি)
পবিত্র কাবায় কারামাতিদের আক্রমণ
শিয়াদের একটি দল হলো কারামাতি। ইরাকের আব্বাসি শাসক ও মিসরে উবায়াদি শাসকদের দুর্বলতার সুযোগে আরব উপদ্বীপের পূর্ব প্রান্তে বাহরাইনে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাদের বিশ্বাস ছিল, হজ জাহেলি যুগের একটি নিদর্শন। হজ মূর্তির উপাসনার মতো। তাই ইসলামের ফরজ বিধান হজ বন্ধ করতে কারামাতি শাসকরা তৎপর হয়ে ওঠে। মূলত ইসলামের ইতিহাসে হজ ফরজ হওয়ার পর কারামাতিরা সর্ব প্রথম কাবায় আক্রমণ করে হাজিদের হত্যা করে।
৩১৭ হিজরি ৯৩০ খ্রিস্টাব্দ ছিল মুসলিমদের বেদনাদায়ক ইতিহাস। বাতিল ফেরকায় বিশ্বাসী বাহরাইনের শাসক আবু তাহের কারামাতির নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সর্ববৃহৎ হাজিদের কাফেলায় আক্রমণ করে। অনেক নারী-পুরুষকে হত্যা করে এবং তাদের সম্পদ ছিনতাই করে। ইরাক ও শাম থেকে মক্কা আসার পথে তারা আতঙ্ক তৈরি করে। ফলে ৩১৭ হিজরি থেকে ৩২৭ হিজরি পর্যন্ত হজের কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
শুধু তা-ই নয়, এ সময় কারামাতি শিয়ারা কাবা প্রাঙ্গণে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি লোক মারা যায়। মক্কার গভর্নরকে হত্যা করে অলিতেগলিতে সব মুসলিমকে তারা হত্যা করতে থাকে। গোসল ও কাফন-দাফন ছাড়াই তাদের কবর দেওয়া হয়। কাবার গিলাফ ছিঁড়ে সব দরজা ভেঙে ফেলা হয়। সর্বশেষ তারা যাওয়ার সময় সঙ্গে করে হাজরে আসওয়াদ নিয়ে যায়। প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় হাজরে আসওয়াদ মক্কায় ছিল না। বাহরাইনের হাজর নামক স্থানে আবু তাহের একটি প্রাসাদ নির্মাণ করে। ‘দারুল হিজরাহ’ নামের এই প্রাসাদে হাজরে আসওয়াদ রাখা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, মানুষ যেন কাবায় গিয়ে হজ না করে। সবাইকে দারুল হিজরায় আনতেই এমনটি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর আব্বাসি খলিফা অনেক দিনারের বিনিময়ে তা আবার কাবার পাশে স্থাপন করেন।
(তারিখুল ইসলাম- ইমাম জাহাবি, ২৩/৩৭৪)