খিলাফাহ উদ্ধারের এক রক্ত জাগানিয়া ইতিহাস। ১৮০৩ সালে লাল ব্রিটিশ বেনিয়ারা প্রবেশ করলো দিল্লীতে। শুরুতেই তারা তখনকার তুর্কী খিলাফাহর আনুগত্বশীল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয় একটি চুক্তির। যার সারসংক্ষেপ ছিলো ‘সৃষ্টি আল্লাহর, সাম্রাজ্য সম্রাট বাহাদুরের,কিন্তু আইন-কানুন চলবে বৃটিশ কোম্পানীর’। সেই দিনই ঢুবে যায় ভারত বর্ষে মুসলমানদের শানদার ইতিহাসের রক্তিম সূর্য। আর সম্রাটের এই কাজে তাকে উৎসাহ দেয় তখনকার দরবারী লেবাসধারী একদল ওলামা । যেই চুক্তির মাধ্যমে ধ্বংস করা হয় মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষা, তাহযীব তামাদ্দুন, আইন আদালত সহ পুরো ১২শত বছরের প্রতিষ্ঠিত সভ্যতাকে।
নামকা ওয়াস্তে কেবল ইসলাম হাড্ডিসার আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নেয়। আর মসজিদ মাদরাসা ধ্বংস আলেম ওলামাদের হত্যা করে তারা জুমআ, ঈদ ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ইসলামকে। এই কঠিন মূহূর্তেও উম্মাহর চেতনাদীপ্ত আকাবীররা বসে থাকেননি। শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ. ভারতকে দারুল হরব ঘোষণা করে জিহাদের ঐতিহাসিক ফতোয়ায় জন্ম নেয় ইংরেজদের বিরুদ্ধে একের পর এক জিহাদ ও সংগ্রামের।যেই সংগ্রামের হাত ধরেই ১৮৫৭ সালে আযাদী আন্দোলনে শামেলীর ময়দানে হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে পরাজিত হলেও উম্মাহর রাহবাররা ক্ষ্যান্ত হননি। ১৮৬৭ সালের ৩০ মে ইংরেজদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চলমান জিহাদকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেন তারা দারুল উলুম দেওবন্দ নামে।
দেওবন্দ মানুষের চর্মচক্ষুতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও এর রুহানিয়ত ও চেতনার বুনিয়াদে সৃষ্টি হয় এক জিহাদী কাফেলার অগ্নিশিখা।যেখান থেকে জিহাদের দাবানল ছড়িয়ে পড়তে থাকে দুনিয়ার দিকেদিকে।
এই প্রতষ্ঠিানেরই প্রথম শিক্ষক; হযরত মাওলানা মোল্লা মাহমুদ। দ্বিতীয়জন ছাত্র; দেওবন্দের নওজোয়ান মাহমুদ হাসান; পরবর্তীতে যিনি শায়খুল হিন্দ নামে খ্যাত হোন ।তিনি বড় হবার পর জমিয়তুল আনসার নামে একটি সংস্থা গঠন করেন । এই সংস্থার অন্যতম সদস্য মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধীকে কাবুল পাঠানো হয় । তিনি আফগান গিয়ে জুনদুল্লাহ নামে একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করেন। ইস্তাম্বুল গিয়ে উসমানি খলিফা আব্দুল হামিদের কাছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সামরিক সাহায্য চান । আফগান অধিপতি আমীর আমানুল্লাহ খানের সাথে চুক্তি হয় যে উসমানি সৈন্যরা আফগান হয়ে হিন্দুস্থানে প্রবেশ করবে। তিনি এসব বর্ণনা একটি রেশমী রুমালে লিখে হিন্দুস্থানে স্বীয় শায়খ শায়খুল হিন্দের কাছে পাঠান। কিন্তু এটা ইংরেজ গুপ্তচরের হস্তগত হয় । ইতিহাসে এটা রেশমী রুমাল আন্দোলন নামে খ্যাত।