সাহাবীগণ কর্তৃক লিখিত হাদীসে নববীর পান্ডুলিপি
আমর ইবনে হাযম রাযি.-এর সহীফা
দশম হিজরীতে আরবের নাজরান এলাকা ইসলামি সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমর বিন হাযম রাযি.কে ইয়ামানের গভর্নর নিযুক্ত করেন। তখন উবাই বিন কাব রাযি.কে দিয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি হাদীসের কিতাব লিখিয়ে আমর বিন হাযম রাযি.কে দেন। উক্ত কিতাবে প্রয়োজনীয় উপদেশ ছাড়াও পবিত্রতা-সালাত-যাকাত-হজ্জ-উমরাহ-জিহাদ-গণীমতের সম্পদ-ট্যাক্স ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে শরীয়তের বিধিমালা উল্লেখিত ছিলো।
আমর বিন হাযম রাযি. এ কিতাবের বিধান অনুসারে নিজ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ইনতিকালের পর এ কিতাব তাঁরই নাতি আবু বকরের কাছে হস্তান্তরিত হয়। ইমাম যুহরি রহ. আবু বকরের কাছেই এ কিতাব পড়েছেন এবং তাঁর সূত্রেই বর্ণনা করেছেন।
সাহাবী আবু হুরায়রা রাযি.-এর পান্ডুলিপি
নবীজির সাহাবীগণের মধ্যে সর্বাধিক হাদীস বর্ণনা করেছেন সাহাবী আবু হুরায়রা রাযি.। তাঁর বর্ণনাকৃত হাদীসের সংখ্যা সর্বমোট ৫৩৭৪। ইসলাম গ্রহণের পর ইলম অর্জন করার জন্য তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। অপরাপর সাহাবীগণের মতো তিনি কোনো জীবিাক নির্বাহ করতেন না।
সর্বদা তিনি মসজিদে নববীর সুফফা কেন্দ্রেই থাকতেন। যাতে তিনি নবীজির সব হাদীসই শুনতে পারেন এবং ঘটমান সবকিছুই তিনি নিজ চোখে অবলোকন করতে পারেন। এ কারণে তিনি ক্ষুৎপিপাসার পীড়ার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। এ সাধনা করার সময়েই তিনি হাদীস লিপিবদ্ধ করতেন।
হাসান ইবনে অঅমর নামে তাঁর এক শিষ্য বর্ণনা করেন-
একবার আবু হুরায়রা রাযি. আমাকে তাঁর ঘরে নিয়ে যান। সেখানে তিনি আমাকে তাঁর লিখিত অনেক কিতাব দেখান। (জামিউ বায়ানিল ইলমঃ ১/১৭৪; ফাতহুল বারিঃ ১/১৮৪)
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাযি.-এর পান্ডুলিপি
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাযি. কে বিশেষভাবে হাদীস লিখার অনুমতি প্রদান করেছিলেন। এর ভিত্তিতে তিনি হাদীসের একটি সংকলন প্রস্তুত করেছিলেন। তাঁর সে সংকলনের নাম ছিলো- ‘আস-সহীফাতুস সাদিকাহ’। তিনি এটাকে সযতেœ সংরক্ষণ করতেন। তাঁর শিষ্য বিশিষ্ট তাবেয়ী মুজাহিদ রহ. বলেন-
একবার আমি সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাযি.-এর কাছে গেলাম। তখন তাঁর বালিশের নিচে একটি পান্ডুলিপি ছিলো। আমি দেখতে চাইলে তিনি আমাকে দেখতে দিলেন না।
আমি বললাম- আপনি তো কোনো কিছু আমার থেকে গোপন করেন না?
তিনি বললেন- এটা হলো সাদিকাহ। এখানে ওই বিষয় সংরক্ষিত আছে- যা আমি সরাসরি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি। তখন তাঁর ও আমার মাঝে তৃতীয় কেউই ছিলো না। যতদিন এ সহীফা ও কুরআন এবং ওয়াহ্জ (ফসলের ক্ষেত) বিদ্যমান থাকবে, ততদিন আমি পৃথিবীর পরওয়া করি না। (জামিউ বায়ানিল ইলমঃ ১/৭২; উসুদুল গাবাহঃ ৩/২৩৩-২৩৪)
পরবর্তীতে তাঁর এ সহীফা তাঁর উত্তরসুরীদের নিকট হস্তান্তরিত হয়। তাঁর পৌত্র আমর ইবনে শু’আইব এ সহীফা থেকেই হাদীসের দরস প্রদান করতেন।
ইয়াহইয়া বিন মায়ীন ও আলী ইবনুল মাদিনী রহ. বলেন-
হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে আমর ইবনে শু’আইব সূত্রে বর্ণিত সমস্ত হাদীসই উক্ত সহীফা থেকে সংগৃহীত ছিলো।
ইবনুল আসীর রহ. বলেন- এ সহীফায় প্রায় এক হাজার হাদীস ছিলো। (তাহযীবুত তাহযীবঃ ৮/৪৯-৫৩; উসুদুল গাবাহঃ ৩/২৩৬)
সাহাবী আনাস বিন মালিক রাযি.-এর পান্ডুলিপি
আনাস বিন মালিক রাযি. ছিলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিশোর সাহাবীগণের একজন। মাত্র দশ বছর বয়সে তাঁর মা তাঁকে নবীজির দরবারে নবীজির খেদমত করার জন্য নিয়ে আসেন। এরপর থেকে ক্রমাগত দশ বছর তিনি নবীজির খেদমত করেন। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি নবীজি থেকে শ্র“ত হাদীসগুলো লিখে সংরক্ষণ করেছিলেন।
তাঁর শিষ্য যায়েদ ইবনে হিলাল এ বিষয়ে বলেন-
আমরা কোনো হাদীস সম্পর্কে আনাস বিন মালিক রাযি.-এর সামনে আলোচনা করলে তিনি ঘর থেকে তাঁর লিখিত হাদীসগুলোর পান্ডুলিপি নিয়ে এসে বলতেন- এ সব হাদীস আমি সরাসরি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি। এরপর নবীজির সামনে পেশ করে সত্যায়ন করে নিয়েছি। (মুসতাদরাকে হাকিমঃ ৩/৫৭৩-৫৭৪)
চলবে …