ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুরআনুল কারীমের সাথে হাদীসের মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় প্রথম দিকে হাদীস লেখা নিষেধ ছিলো; কিন্তু পরবর্তীতে কুরআন প্রায় লিখিতভাবে সংরক্ষিত হওয়ার পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস লিখার অনুমতি প্রদান করেন।
এভাবেই হাদীস সংরক্ষণের ধারা শুরু হয়। পরবর্তীতে একাধিক পর্যায়ে হাদীস সংরক্ষণের কাজ হয়। নিম্নে সংক্ষেপে তা উল্লেখ করা হলো-
প্রথম পর্যায়ঃ নববী যুগে হাদীস সংকলন
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস লিখার অনুমতি দেওয়ার পর তখন থেকেই কোনো কোনো সাহাবী নবীজির জীবদ্দশাতেই হাদীস লিখে সংরক্ষণ করতে শুরু করেন। আর এটা ছিলো হাদীস সংরক্ষণের প্রথম পর্যায়। সাধারণত সাহাবীগণ তিন পদ্ধতিতে হাদীস সংরক্ষণ করতেন।
এক. মুখস্থ করে হাদীস সংরক্ষণ; আল্লাহ তা’আলা তৎকালীন আরবের অধিবাসীদেরকে অভাবনীয় বিষ্ময়কর স্মরণশক্তি দান করেছিলেন। তাই তাদের জন্য মুখস্থ করে রাখাটাই সর্বাধিক সহজ ও নির্ভরযোগ্য পন্থা ছিলো।
দুই. হাদীস শোনার পরে সে অনুযায়ী আমল করা।
তিন. হাদীস লিখে সংরক্ষণ করা। এ পর্যায়ে কোনো কোনো সাহাবী ব্যক্তিগতভাবে হাদীস লিখে রাখতেন। তাঁদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলেন- আব্দুল্লাহ বিন আমর রাযি.। তাঁর লিখিত হাদীসের সংগ্রহ “সহীফায়ে সাদিকাহ” নামে প্রসিদ্ধ।
এছাড়া সাহাবী আলী বিন আবি তালিব রাযি., আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. এবং আনাস বিন মালিক রাযি.ও ব্যক্তিগতভাবে হাদীসের সংকলন তৈরি করেছিলেন।
তবে এ সব সাহাবীদের সংকলন অধ্যায় আকারে কিংবা বিষয়ভিত্তিক ছিলো না। বিক্ষিপ্তভাবে তাঁরা বিভিন্ন হাদীস সংকলন করে রেখেছিলেন। এমনকি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও কিছু হাদীস লিখিয়েছেন। নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু নমুনা তুলে ধরা হলো-
নবীজির সরাসরি তত্ত্বাবধানে লিখিত হাদীসের পান্ডুলিপি
‘কিতাবুস সাদাকাহ’ সংকলন
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাকাতের নিসাব সম্পর্কে শরীয়তের বিধানগুলো একটি ফাইলে লিখিয়েছিলেন। ওই ফাইলে কোন ধরণের সম্পদে যাকাতের জন্য কি পরিমাণ নিসাব নির্ধারিত হবে- এ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যাকাতের নিসাব সম্পর্কিত এ ফাইলের নাম ছিলো ‘কিতাবুস সাদাকাহ’।
এ প্রসঙ্গে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. বলেন-
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘কিতাবুস সাদাকাহ’ লিখিয়েছিলেন। কিন্তু এ লেখার ফাইল প্রাদেশিক গভর্নরদের কাছে প্রেরণ করার আগেই তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ফাইলটি তরবারির সাথে সংযুক্ত করে রেখেছিলেন।
অতঃপর প্রথম খলিফা আবু বকর রাযি. মৃত্যু পর্যন্ত সে অনুযায়ী আমল করেন। তাঁর পরে দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনে খাত্তাব রাযি.ও মৃত্যু পর্যন্ত এভাবেই আমল করেন। উক্ত ফাইলে একটি বিধান এ রকম ছিলো- পাঁচটি উটে একটি বকরি যাকাত দিতে হবে।
(সুনানে তিরমিযীঃ পৃ-১৩৫)
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম যুহরি রহ. স্বীয় ছাত্রদেরকে যাকাতের নিসাব সম্পর্কিত এ কিতাব পড়াতেন। তিডিন গর্ব করে বলতেন- এ হাদীসগুলো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের লেখানো যাকাতের নিসাবের ফাইল থেকে সংগৃহীত। এর মূল কপি খলিফা ওমর বিন আব্দুল আযীয রহ.-এর সন্তানদের কাছে সংরক্ষিত আছে। ওমর বিন আব্দুল আযীয রহ.-এর নাতি সালেম আমাকে এ হাদীসগুলোর শিক্ষা দিয়েছেন। আমি সেগুলো মুখস্থ করে নেই।
চলবে …